খটখট শব্দে মুখর রাঙামাটির তাঁতপল্লী, অর্ধকোটি টাকা বিক্রির আশা

তাঁতের খটখট ও ঝুমঝুম শব্দ জানান দিচ্ছে সামনে আসছে ঈদ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির তাঁতপল্লীগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। চাহিদা অনুযায়ী ঈদের পোশাক তৈরিতে এখন তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারখানার মালিক ও শ্রমিকদের কোলাহলে সরব হয়ে উঠেছে তাঁতপল্লী।
ঈদের ছুটিতে রাঙামাটি ভ্রমণ করেন হাজারো পর্যটক। আর এসব পর্যটকদের আগ্রহ থাকে স্থানীয় বাসিন্দাদের তাঁতের তৈরি পণ্যে। আর পর্যটকদের বাড়তি এই চাহিদা যোগান দিতে তাঁতপল্লীগুলো এখন দিন-রাত সরব। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে এমন ব্যস্ততায় খুশি মালিক ও শ্রমিকরা।
সাধারণত দেশের অন্যান্য তাঁতপল্লীগুলো ঈদের পোশাক নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও রাঙামাটির তাঁতগুলোর ক্ষেত্রে সেটা কিছুটা ভিন্ন। ঈদের ছুটিতে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাঁতপণ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের চেয়ে পর্যটকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয়। তবে তাঁতের তৈরি পাঞ্জাবির চাহিদা রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে।
শহরের টেক্সটাইল কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পোশাক তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদনের তাগিদও বেশি। পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন-হাদি, তাঁতের পাঞ্জাবি, ফতুয়া, জামা, রুমাল, গামছাসহ আরও বিভিন্ন রকমের তাঁতপণ্যের চাহিদা থাকে পর্যটকদের কাছে। শতভাগ কটনের তৈরি এসব কাপড় পরিধানে যেমন আরাম তেমনি এর দাম অন্যান্য তাঁতপণ্যের তুলনায় অনেক বেশি।
শহরের আসামবস্তী টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক জোনাকি চাকমা বলেন, ঈদ আসলে আমাদের ব্যস্ততা কিছুটা বেড়ে যায়। কারণ ঈদের ছুটিতে রাঙামাটিতে অনেক পর্যটক বেড়াতে আসেন। তারা তাঁতের তৈরি এসব পণ্য কিনে নিয়ে যান। তাদের আগ্রহের কথা মাথায় রেখেই গামছা, পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি করছি।
শহরের স্বর্ণটিলা আর এস টেক্সটাইলের মাস্টার রনি মারমা বলেন, রাঙামাটির অন্যান্য টেক্সটাইলগুলোর মতো আমাদের এখানে কাজের প্রচুর চাপ। শ্রমিকরা প্রতিদিন ওভারটাইম করছেন। মূলত ঈদকে সামনে রেখেই আমরা আমাদের পণ্যগুলো তৈরি করছি। আশা করছি, ঈদে ভালো একটা ব্যবসা হবে।
কারখানায় উৎপাদিত পণ্য চলে যাচ্ছে তাঁতের শো-রুমগুলোতে। শহরের তবলছড়ি টেক্সটাইল মার্কেট, রিজার্ভ বাজার, কাঁঠালতলী ও পর্যটনে টেক্সটাইল দোকানগুলো ভরে উঠেছে নিত্যনতুন পণ্যে। রমজান মাসে পর্যটক না আসায় বিক্রি না থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে দোকানগুলোতে এখন সাজসাজ রব। প্রতিদিনই দোকানে আসছে নতুন নতুন কালেকশন। আর বিক্রয়কর্মীরাও ব্যস্ত এসব পণ্য দিয়ে দোকান সাজাতে।
আরও পড়ুন
পর্যটন ঝুলন্ত সেতু এলাকার বনানী টেক্সটাইলের স্বাত্ত্বাধিকারী রাহুল চাকমা বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা নতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শাড়ি, ফতুয়া, গামছাসহ ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি পণ্যগুলো তুলেছি। আশা করছি, ঈদের ছুটিতে বেশ ভালো রকমের পর্যটক সমাগম ঘটবে। পর্যটকদের কাছে তাঁতের পণ্যগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে।
চাহিদা থাকায় পর্যটকদের জন্য নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়ে রাঙামাটি টেক্সটাইল মালিক সমিতির সভাপতি বাবলা মিত্র বলেন, আমাদের রাঙামাটিতে টেক্সটাইল একটি ঐতিহ্যবাহী পণ্য। যারা দূরদূরান্ত থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসেন তারা পরিবার-পরিজনের জন্য এখান থেকে উপহার নিয়ে যান। ঈদ উপলক্ষে আমরা পর্যাপ্ত পণ্য তৈরি করে প্রস্তুতি রেখেছি। রাঙামাটির সব কারখানায় রাত-দিন কাজ চলমান আছে। পর্যটকরা নিত্যনিতুন অনেক ডিজাইনের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন বলে আশা রাখছি।
আসন্ন ঈদের ছুটিতে রাঙামাটিতে অর্ধ কোটি টাকার তাঁতপণ্য বিক্রির আশা প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা।
মিশু মল্লিক/এএমকে