আগুন নিভলেও পর্যবেক্ষণে থাকবে সুন্দরবন

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তেইশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় স্পষ্ট আগুন না থাকলেও অতিরিক্ত সতর্কতার কারণে ফায়ার আউট ঘোষণা করেনি বন বিভাগ। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাতভর পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ছিটানো হবে পানি। বুধবার (২৬ মার্চ) দিনেও পর্যবেক্ষণ করা হবে, সেই সঙ্গে স্বল্প পরিসরে বনে থাকবেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
বিজ্ঞাপন
রোববার (২৩ মার্চ) সকালে আগুনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে অগ্নি নির্বাপণে কাজ শুরু করে বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা। ভোলা নদীতে জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে ছিটানো হয় পানি। সোমবার দিনে এবং রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পানি ছিটায় বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস। এসব কর্মযজ্ঞে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এবং সুন্দরবন বন বিভাগের অধিকাংশ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বনরক্ষী। এ ছাড়া স্থানীয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকও অংশ নেন। মঙ্গলবার সকালে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে এলে আগুন ও ধোঁয়ার খোঁজে শুরু হয় পর্যবেক্ষণ। ধোঁয়া দেখলেই ছিটানো হয় পানি। বিকেল পর্যন্ত দু-এক জায়গায় ধোঁয়া দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের লোকেরা পানি ছিটিয়ে আগুন শতভাগ নির্বাপণের চেষ্টা করেন। ভোলা নদীতে পানি থাকা সাপেক্ষে রাতেও পানি ছিটানো হবে। সেই সঙ্গে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে আগুন বা ধোঁয়ার অস্তিত্ব।
এদিকে স্পষ্ট আগুন না থাকায় আজ সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা কমাতে থাকে কর্তৃপক্ষ। সকালেই ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট পাঠিয়ে দেওয়া হয়, সারা দিন কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের বাকি পাঁচটি ইউনিট। আজ রাতে দুটি ইউনিট থাকবে বনে।
বিজ্ঞাপন
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক সাকরিয়া হায়দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা আগুন নেভানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এখন আগুন সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এর পরেও অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। রাতে আমাদের দুটি ইউনিট কাজ করবে।
বিজ্ঞাপন
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, বিকেলেও দু-এক জায়গায় ধোঁয়া দেখা গেছে। যার কারণে রাতেও আমরা পানি ছিটাব। বুধবার সকালেও পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর পরে নির্ধারণ করা হবে কখন ফায়ার আউট ঘোষণা করা হবে।
এদিকে গেল রোববার (২৩ মার্চ) সকালে লাগা আগুনে তেইশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকার ক্ষতি স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বলাগাছসহ ৯০ শতাংশ গাছ শুকিয়ে গেছে। বেশকিছু বড় সুন্দরী গাছের পুরে যাওয়া গোড়ার অস্তিত্ব দেখা যায় তেইশের ছিলা-শাপলার বিলে। ধারণা করা হচ্ছে আগুনের তাপে শুকিয়ে যাওয়া এসব গাছ দ্রুতই মারা যাবে। সুযোগমতো স্থানীয় দুষ্টু লোকেরা এসব গাছ কেটে নিয়ে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন। কলমতেজী ও শাপলার বিলের আগুনে প্রায় ১০ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
অন্যদিকে কলমতেজী ও তেইশের ছিলা-শাপলার বিল এলাকায় আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। দুটি কমিটিতেই চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) দিপন চন্দ্র দাসকে প্রধান করা হয়েছে। এই কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ফায়ার আউট ঘোষণা হওয়ার আগে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে নারাজ তদন্ত কমিটির প্রধান।
শেখ আবু তালেব/এমজেইউ