৫ বছর ধরে বিনামূল্যে সেহরি খাওয়াচ্ছেন মঞ্জু

মঞ্জুর ছোট্ট ভাতের হোটেল। মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের সেহরি খাওয়ার ডাক আসতেই হোটেল পরিপূর্ণ। গরু-মুরগির মাংস, মাছ, সবজিসহ নানা পদের তরকারিতে সেহরি খেতে ব্যস্ত রোজাদাররা। কিন্তু খাওয়া শেষে কাউকে বিল পরিশোধ করতে হয় না। এভাবেই পাঁচ বছর ধরে অসহায়দের বিনামূল্যে সেহরি খাওয়ান নোয়াখালীর সদর উপজেলার বাসিন্দা মো. মঞ্জু।
জানা যায়, সদর উপজেলার পূর্ব লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের বসিরার দোকানে নিজের ছোট খাবারের হোটেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন মো. মঞ্জু। ঠিক সেহরির সময় হলে খেটে খাওয়া দিনমজুর এবং নিম্ন আয়ের রোজাদাররা প্রবেশ করেন। কিন্তু মঞ্জু তাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেন না। ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় থেকে শুরু হওয়া উদ্যোগটি প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এদিকে বিনামূল্যে খাবার পেয়ে বেশ খুশি রোজাদাররা। এমন উদ্যোগে মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন হোটেল মালিক মো. মঞ্জু।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাশেদ রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষদের সেহরি খাওয়াচ্ছেন মঞ্জুর। যার বেশির ভাগ মানুষ অসহায় ও হতদরিদ্র। সেহরিতে ভাত, ডাল, মাছ, সবজি, মুরগি ও গরুর মাংসের আয়োজন থাকে। প্রবাসীসহ অনেকেই তাকে সহযোগিতা করেন, আর সেই আর্থিক সহযোগিতায় ওপর নির্ভর করে খাবারের মেন্যু নির্ধারণ করা হয়।
ইয়াসিন আরাফাত নামের এক রোজাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঢাকা থেকে গাড়িতে মাল নিয়ে নোয়াখালী এসেছি। মঞ্জু ভাইয়ের হোটেলে সেহরি খেলাম। খাওয়া শেষে টাকা দিতে চাইলে তিনি নেননি। পরে শুনলাম এখানে ফ্রিতে সেহরি খাওয়ানো হয়।
মো. দুলাল হোসেন নামের একজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, রেললাইন বা রেলস্টেশন থাকায় অনেক মানুষ এখানে থাকে। আমি প্রায় এখানে এসে সেহরি করি। পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে এসে বিনা মূল্যে সেহরি করেন। এমন আয়োজন দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে। আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।
সেহরি খেতে আসা মো. রফিক উল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, মঞ্জু ভাই ছোট ব্যবসায়ী হয়েও তিনি মানুষের সেবা করছেন। অনেকের খুব বেশি টাকা থাকলেও এমন মহৎ কাজ করেন না। এখানে সর্বস্তরের মানুষ খেতে আসেন। সমাজের যারা বিত্তবান রয়েছেন তারা যদি এমন উদ্যোগ নিতেন অথবা মঞ্জু ভাইকে সহযোগিতা করতেন তাহলে আরও ভালো হতো।
এ বিষয়ে মো. মঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেহরি খাওয়াতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্যের। আমি অত্যন্ত খুশি। প্রতিবছর আয় থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রাখি। এরপর রমজান মাস এলে সেই টাকা থেকে বিনামূল্যে সেহরির আয়োজন করি। এখানে হাসপাতালের রোগীর স্বজন, যানবাহনচালক, রেলস্টেশনের যাত্রী, শ্রমিকসহ প্রতিদিন অর্ধশতাধিক মানুষ আসেন সেহরি করতে। এটা আমার অনেক ভাল লাগে। যতদিন বেঁচে আছি ততদিন এ কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে মো. মঞ্জু যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তা প্রশংসনীয়। এটি একটি মহৎ কাজ। অনেকের অঢেল সম্পদ থাকলেও মন থাকে না। তাকে দেখে অন্যদের এমন মানবিক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
এমজেইউ