২ বছরেও চালু হয়নি রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নতুন ভবন

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে চালু হয় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল। হাসপাতালটির কিছুটা সংস্কার করে বর্তমানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে দুই থেকে আড়াইশ রোগীকে। বেড না পেয়ে মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের।
বিজ্ঞাপন
এদিকে দীর্ঘ দুই বছরেও রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের নির্মিতব্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবনটি চালু হয়নি। এতে আধুনিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার মানুষ। দুই বছর আগে ১১তলা বিশিষ্ট এই ভবনের ছয়তলার কাজ শেষে চালু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো চালু হয়নি নতুন ভবনের কার্যক্রম। গণপূর্ত অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভবনের কাজ শেষ, বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য হাসপাতালকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সিভিল সার্জন জানিয়েছে, শিগগিরই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্তমান ভবনের পাশেই নির্মাণকাজ শুরু হয় ১১তলা বিশিষ্ট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবনের। ভবনটিতে আইসিইউ, সিসিইউ, ডায়ালাইসিস সুবিধা, উন্নত ল্যাব সুবিধা ও একাধিক অপারেশন থিয়েটারের ব্যবস্থা থাকার কথা রয়েছে। ২০২৩ সালের শুরুতেই ছয়তলা ভবনের নির্মণকাজ শেষে কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও আজও শুরু হয়নি ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নতুন এই ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম। বর্তমান ভবনে গাদাগাদি করে সেবা নিতে গিয়ে রোগীদের কষ্টের কথা জানান স্বজনরা।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মৃদুল নন্দী বলেন, হাসপাতালে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী। তখন বেড না পেয়ে রোগীদের ফ্লোরে থাকতে হয়। এভাবে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এবং সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
আরেক রোগীর স্বজন বাবলু সেন বলেন, আমরা অনেক দুর্গম উপজেলা থেকে জেলা সদরের এই হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসি। কিন্তু আমরা বেড পাই না। অনেক বছর যাবৎ শুনে আসছি নতুন হাসপাতালটা চালু হবে, কিন্তু এখনো চালু হচ্ছে না। এটি চালু হলে রোগীরা আধুনিক চিকিৎসাসেবা পেতেন।
রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শওকত আকবর বলেন, জেনারেল হাসপাতাল ১০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও মূলত এটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি ভবন। যখন অতিরিক্ত রোগী চলে আসে তখন আমরা তাদের ফ্লোরে দিচ্ছি। কিন্তু অনেক সময় ফ্লোরেও জায়গা হয় না। শীতকালে আমাদের এখানে ১০০-১৫০ রোগী হয়, গরমকালে সেটি ২০০ জনে গিয়ে পৌঁছায়। আমরা অতি কষ্টে আমাদের সেবা কার্যক্রম চলমান রাখছি। আমাদের নতুন ভবনের প্রয়োজন। নাহলে রোগীদের সেবা দিতে আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
ভবনের কাজ শেষ, বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য সিভিল সার্জনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাঙামাটি গণপূর্ত অধিদপ্তর। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শর্মি চাকমা বলেন, রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ ডিপিপি অনুযায়ী শতভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং আমরা ইনভেন্টরি লিস্ট করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে পত্রও দিয়েছি। ওনারা কমিটি করে ভবনের সার্বিক দিকগুলো চেক করে ভবন বুঝে নিতে পারবেন।
অন্যদিকে শিগগিরই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা। তিনি বলেন, আমরা এটি এখনো গণপূর্ত থেকে বুঝে নিইনি। আমরা যতটুকু দেখেছি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় সমাপ্তির দিকে। সম্ভবত খুব শিগগিরই আমরা এটি বুঝে নিতে যাচ্ছি। আপাতত ১০০ শয্যা নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। বর্তমানে সবসময় ১৫০-এর অধিক রোগী থাকেন। এটি আমাদের জন্য একটি বিব্রতকর পরিস্থিতি। তাই এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি। মন্ত্রণালয়ে আমরা ফাইল অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছি। খুব শিগগিরই হয়তো আমরা অনুমোদন পেতে যাচ্ছি। অনুমোদন পেলে তখন সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এটি আমাদের জন্য একটি যুগান্তকারী বিষয় হবে বলে আমি মনে করি।
মিশু মল্লিক/এএমকে