ফিলিস্তিনকে বাঁচাতে বিশ্ব মুসলিম বিবেককে জাগ্রত হওয়ার আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে বিভাগীয় নগরী রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে তৌহিদি জনতাসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধ করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে ইসরায়েলি বাহিনীর বিচারের দাবি জানানো হয়।
শুক্রবার (২১ মার্চ) জুমার নামাজের পর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করা হয়। মিছিল থেকে ‘নেতানিয়াহুর দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে; বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো; জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার; নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার; ইসরায়েলের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
পরে বাংলার চোখের আয়োজনে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে ইত্তিহাদুল ওলামা পরিষদের ব্যানারে টাউন হল চত্বরে এবং সিটি বাজারের সামনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে থেকে বিক্ষুদ্ধ মুসলিম জনতা বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে মানবতার দুশমন ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ইতিহাসের নিকৃষ্টতম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পরও ইসরায়েল গাজায় একের পর এক বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। ১৮ মার্চের হামলাটি ছিল অত্যন্ত নিকৃষ্টতম। এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল যুদ্ধনীতি লঙ্ঘন করেছে এবং নির্মম বর্বরতা চালিয়েছে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ড বাঁচাতে হবে। মুসলমান ভাই-বোনদের বাঁচাতে হবে। এজন্য বিশ্ব মুসলিম বিবেককে আগে জাগ্রত হতে হবে। নয়তো ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিনের মতো একদিন অন্য মুসলিম দেশগুলোও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের শিকার হবে।
প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলার চোখের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান তানবীর হোসেন আশরাফী, হাজী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ, নূরে মদিনা জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. আবু ইসাহাক, তেঁতুলতলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা জুলফিকার আনসারী প্রমুখ।
টাউন হলের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করে ইত্তিহাদুল ওলামা পরিষদ। ওলামাগণ বলেন, জাতিসংঘ সম্পূর্ণ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এখনো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় চলে জাতিসংঘ। এই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ব্যবস্থার পতন না হলে সারা বিশ্বের কোনো মানুষ, কোনো অঞ্চল নিরাপদ নয়। সন্ত্রাসী-দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরব লীগ ও ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং শান্তিপ্রিয় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অন্যদিকে সিটি বাজারের সামনে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশে বক্তারা বলেন, ফিলিস্তিনে ছোট ছোট শিশু ও সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এই নির্মমতা আমাদের বিবেককে নাড়া দেয়, কিন্তু বিশ্ব বিবেক যেন নির্বিকার। দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল ক্রমাগত ফিলিস্তিনকে কোণঠাসা করছে। যদি এই নিপীড়ন চলতে থাকে, তবে কয়েক দশকের মধ্যেই ফিলিস্তিন বিশ্ব মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে। আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং ন্যায়সংগত অধিকার না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ চলবে।
এদিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেওয়া তৌহিদি জনতা গাজার যুদ্ধবিধ্বস্তদের প্রতি সমর্থনের চিহ্ন হিসেবে অনেকেই কেফিয়েহ নামের ফিলিস্তিনি স্কার্ফ পরেছিলেন। তাদের হাতে ফিলিস্তিনের পতাকাসহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডও ছিল। সেসব প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চাই’, ‘সেভ গাজা-ফ্রি ফিলিস্তিন’ প্রভৃতি বক্তব্য।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রংপুরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে করেছে রংপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামী।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ