যেভাবে ভিক্ষুক হয়ে গেলেন আলমগীর
দিনমজুরি করে কোনোরকম সংসার চালাতেন আলমগীর হোসেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় পড়ে একেবারেই সর্বস্বান্ত হয়ে গেলেন কৃষক আলমগীর হোসেন। টাকার অভাবে পারছেন না চিকিৎসা করাতে। তাই তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম তাকে ভ্যানগাড়িতে করে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাচ্ছেন কোনোরকমে।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠেরপাড় (কামাত) গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন আলমগীর হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন-চার মাস আগে মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মাটিতে পড়ে গিয়ে মাথায় রক্তক্ষরণ হয়, পা ও কোমরে প্রচুর আঘাত পান আলমগীর হোসেন। সেই দুর্ঘটনায় তার জীবনে নেমে আসে দুর্দশা।
পরিবারের একমাত্র আয় করার ব্যক্তিই আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বিছানায় শুয়ে। সংসারের আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় ওষুধ তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবারও জুটছে না এখন আলমগীরের কপালে। চার-পাঁচ দিন পর পর ৭০০-৮০০ টাকার ওষুধ কিনতে হয়। তা-ও পারেন না টাকার অভাবে। প্রায় চার মাস চিকিৎসার পর এখনো সুস্থ হয়ে ওঠেননি তিনি। তাই তার স্ত্রী তাকে নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলছেন।
আলমগীরের পরিবার জানায়, তাদের কোনো আবাদি জমিজমা নেই, শুধু ২ শতাংশ জমিতে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি ঘর আছে। তিনি চার কন্যাসন্তানের জনক। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে তার কাছেই থাকেন। মেয়ের নাম নাজমিন আক্তার। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে।
আলমগীর হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে (রমেক) চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু টাকার অভাবে রংপুরে নিতে পারছি না। আমার একটা ছেলেসন্তান নাই। স্বামীর আয় দিয়ে কোনোরকম সংসার চলত। এখন তাও চলে না।
এ বিষয়ে ভাঙামোড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শুনেছি তিন-চার মাস আগে একটি দুর্ঘটনায় আলমগীর পঙ্গু হয়ে যান। পরিবারটি নিতান্তই গরিব। আমি চিকিৎসাসহায়তা করার জন্য চেষ্টা করব।
ফুলবাড়ি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রায়হানুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অসুস্থ আলমগীর যদি কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা উপপরিচালক বরাবর চিকিৎসার জন্য আবেদন করেন, তাহলে সহায়তা পাবেন। তা ছাড়া তিনি যদি সরকারি কোনো চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসা করাতে চান, আমরা সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেব।
আলমগীর হোসেনকে সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন আলমীগের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের ০১৭৪৩৪৬৮৬৫৫ এই নম্বরে।
মো. জুয়েল রানা/এনএ