ঋণের টাকায় কেনা ভ্যান ছিনতাই, তিন সন্তানকে নিয়ে কাঁদছেন জাহাঙ্গীর

গত ছয় মাস আগে একটি এনজিওর মাধ্যমে ঋণ নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যান ক্রয় করেন অসুস্থ বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর আলম (৫৫)। সেই ভ্যানটি তাকে ও তার ছেলেকে হাত-পা বেঁধে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতিকারীরা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) ভোররাতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কের ফাঁকা মাঠে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
উপার্জনের একমাত্র সম্বল ভ্যানটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। একদিকে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ অপরদিকে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
ভুক্তভোগী ভ্যানচালক জাহাঙ্গীর আলম সদর উপজেলার মাখালডাঙ্গা গ্রামের মাঝের পাড়ার মৃত. ইউনুস আলী মণ্ডলের ছেলে। তার তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে এইচএইচসি পরীক্ষার্থী, মেজো ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণি ও ছোট ছেলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ভ্যান চালিয়েই বৃদ্ধ জাহাঙ্গীর ছেলেদের পড়াশোনাসহ সংসার চালাতেন।
আরও পড়ুন
জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার মারকাজ মসজিদে চারজনকে রেখে এসেছিলাম। শুক্রবার সাহরির পর নিতে আসতে বলেছিলেন। সেই মোতাবেক আমি ভোর ৪টার দিকে আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে বাড়ি থেকে তাদের নিয়ে আসার জন্য বের হই। এ সময় বেলগাছি-মাখালডাঙ্গা সড়কে কলা গাছ দিয়ে ব্যারিকেড দেখতে পাই। সেখানে থামার সঙ্গে সঙ্গে দুজন ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের জিম্মি করে। পরে আমার ও আমার ছেলের হাত-পা বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রাখে।
তিনি আরও বলেন, ছিনতাইকারীরা আমার ও আমার ছোট ছেলের পরনের লুঙ্গি কেটে চোখ, হাত-পা বেঁধে ফেলে। আমার ছোট ছেলের সামনে আমাকে উলঙ্গ না করার অনুরোধ করলে তারা আমার আকুতি শোনেনি। এছাড়াও সাহরির খুব বেশি সময় নেই জানালেও সে আকুতি না শুনে আমাদের বেঁধে রেখে ভ্যান, মোবাইল নিয়ে চলে যান। পরে কোনোরকমভাবে বাধন খুলে আমরা বাড়িতে পৌঁছাই।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ৬ মাস আগে আমি দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত নতুন পাখিভ্যানটি কিনেছি। এই ভ্যান চালিয়ে ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধসহ ছেলেদের পড়াশোনার খরচ এবং কোনোমতে সংসার চালাই। এখন কীভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করব? আবার সংসার চালাব কীভাবে, এই কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
প্রতিবেশী লবাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম একজন অসহায় ব্যক্তি। তার ভ্যানটি সন্ত্রাসীরা (ছিনতাইকারী) কেড়ে নিয়েছে। এখন আর তার চলার কোনো গতি নেই। সমাজের বিত্তবান ও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করছি। এছাড়া অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি করেন তিনি।
আরেক নারী প্রতিবেশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাহাঙ্গীর আলম খুব কষ্ট করে সংসার চালাই। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। লোন নিয়ে ভ্যানটি কিনেছিলেন। এই ভ্যানের উপার্জনের মাধ্যমে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসার চালাইতো। এখন ভ্যানটি হারিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। আমরা চাই তাকে সবাই সহযোগিতা করুক।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) খালেদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে অভিযুক্তদের শনাক্তের চেষ্টাও করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
আফজালুল হক/এআইএস