‘ভিডিও বন্ধ না করলে পেটাবো’ বলেই সাংবাদিককে মারধর

রংপুরের বদরগঞ্জে পুলিশ সদস্যদের বাগবিতণ্ডার ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করার সময় এক সাংবাদিককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। পরে পুলিশ সদস্যরা ওই সাংবাদিককে থানায় নিয়ে যান। গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে বদরগঞ্জ থানার কাছে এ ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম এমএ সালাম বিশ্বাস। তিনি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বদরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বাম হাতে ও পায়ে আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন।
এমএ সালাম বিশ্বাস জানান, বুধবার বিকেল ৩টার দিকে তিনি বদরগঞ্জ থানার মূল ফটক থেকে ১০০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় থানার ভেতর থেকে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যান তার সামনে এসে থামে। পিকআপ ভ্যানের ভেতরে কয়েকজন পুলিশ সদস্য বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এ দৃশ্য তিনি মুঠোফোনে ভিডিও করছিলেন। তখন কনস্টেবল আল আমিন (২৩) তাকে ভিডিও করতে নিষেধ করেন।
বিজ্ঞাপন
সালাম বিশ্বাসের ধারণ করা ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ‘ওই পুলিশ সদস্য (আল আমিন) ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে থাকেন, ‘ভিডিও বন্ধ না করলে পেটাবো।’ একপর্যায়ে তিনি থাবা দিয়ে মুঠোফোনটি কেড়ে নেন।
সালাম বিশ্বাস অভিযোগ করেন, মুঠোফোন কেড়ে নেওয়ার পর পুলিশের ওই সদস্যসহ পিকআপ ভ্যান থেকে নেমে এসে আরও তিনজন পুলিশ সদস্য তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে কিলঘুষি মারেন। এরপর ওই পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে তাকে চেংদোলা করে ধরে থানার ভেতরে নিয়ে যান।
বিজ্ঞাপন
ওই ঘটনার খবর পেয়ে উপজেলায় কর্মরত অন্তত ১০ সংবাদকর্মী থানায় ছুটে যান। পরে পুলিশ সদস্যদের ওই কর্মকাণ্ডে দুঃখ প্রকাশ করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরাও ক্ষমা চান।
এ নিয়ে জানতে চাইলে কনস্টেবল আল আমিন বলেন, আমরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে উচ্চ স্বরে কথা বলছিলাম। এ সময় মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করছিলেন ওই সাংবাদিক। তার পরিচয় জানতে চেয়ে ভিডিও ধারণ করতে নিষেধ করি। কিন্তু তিনি তা শোনেননি। এ কারণে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে তাকে থানার ভেতরে নিয়ে যাই। তাকে কোনো মারপিট করিনি।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ওই পুলিশ সদস্যরা রংপুর পুলিশ লাইন্স থেকে বদরগঞ্জ থানায় এসেছিলেন। দায়িত্ব পালন শেষে তারা রংপুরে যাচ্ছিলেন। থানা ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা ওই সংবাদকর্মীর সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অপেশাদারি আচরণ করেছেন। পরে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় ঘটনাটি আপস–মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সাংবাদিককে মারধরের এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
আবার অনেকেই ফেসবুকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘প্রান্তিক জনপদের সংবাদকর্মী আব্দুস সালাম বিশ্বাস— কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। অথচ বদরগঞ্জ থানার এএসআই রবিউল ও কনস্টেবল আলামিনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত হন। আর তাদের ভিডিও ধারণ করার মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করেছে।কেবল কি তাই? লাথি মেরে, ওপরে তুলে আছাড় দিয়ে যে নিষ্ঠুরতা দেখানো হয়েছে, তা কি সভ্য সমাজের চিত্র?’
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর