বাউফলে তরমুজের বাম্পার ফলন, ১০০ কোটি টাকারও বেশি বিক্রির সম্ভাবনা

পটুয়াখালীর বাউফলে এবার তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। রমজান মাসের বাজার ধরতে আগাম জাতের তরমুজ আবাদ করায় চাষিরা ভালো ফলন ও দাম পাচ্ছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তির হাওয়া বইছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুরু থেকেই কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা আধুনিক চাষাবাদের কৌশল অনুসরণ করতে পারেন। এতে রোগবালাইও তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে এবার তরমুজের চাষ হয়েছে। মোট ৪,২৪৪ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩,৫০০ হেক্টর। এর মধ্যে ১,২৫০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল আগাম জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
জানা যায়, উপকূলীয় এ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে গত কয়েক বছর ধরেই তরমুজের আবাদ বাড়ছে। বিশেষ করে কালাইয়া, চন্দ্রদ্বীপ, কেশবপুর ও ধুলিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে আবাদ বেশি হয়ে থাকে। বাউফলে সড়ক ও নৌপথের ভালো যোগাযোগ থাকায় চাষিরা সহজেই তরমুজ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠাতে পারছেন।
বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা সরাসরি জমি থেকে পাইকারি দরে তরমুজ কিনে নিচ্ছেন। তরমুজের মৌসুম সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চে শুরু হয়, তবে চাষিরা এবার রমজানকে লক্ষ্য রেখে ডিসেম্বরেই উচ্চফলনশীল আগাম জাতের তরমুজ লাগান। এতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই বাজারে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়, যা এখনো পুরোদমে চলছে।
রমজানের শুরুর দিকে বড় সাইজের ১০০টি তরমুজ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে দাম কিছুটা কমেছে। এখন বড় সাইজের ১০০টি তরমুজ ২৫ হাজার থেকে ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের তরমুজ ১৭-১৮ হাজার টাকা এবং ছোট সাইজের ১০-১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারের চাহিদা এখনো ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
তরমুজ চাষি শামীম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর ঝড়-বৃষ্টি নেই, তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। বাজারের দামও খুব ভালো পাচ্ছি। চাষিরাও খুব খুশি। আমি সাড়ে ৯ কানি (বিঘা) জমিতে তরমুজ চাষ করেছি, এখন পর্যন্ত ৩ কানি জমিতে ৪ হাজার তরমুজ কাটা হয়েছে। তরমুজ চাষে এ বছর আনুমানিক আমার ১৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এমন আবহাওয়া থাকলে আশা করি ১৫ লাখের বেশি মুনাফা হবে।
তরমুজ চাষি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর ফলন খুব ভালো হয়েছে। শুরুতে দামও ভালো পেয়েছি, এখন কিছুটা কমলেও লাভ হচ্ছে। রমজানের জন্য আগাম চাষ করায় ভালো দাম পেয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মিলন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাউফলে এ বছর ৩,৫০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কৃষকরা তরমুজ আবাদ শুরু করলেও ৪,২৪৪ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। এখানে বিভিন্ন জাতের মধ্যে পাকিজা, এশিয়ান টু, বিগ ফ্যামিলি, সুইট ফ্যামিলি, ফ্যামিলি টু, ড্রাগন, জেব্রা কিং জাতের তরমুজ আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে তরমুজে বাম্পার ফলন হয়েছে। রোজার শুরুতেই কৃষকরা তরমুজ বাজারে বিক্রি করা শুরু করেছে এবং রোজাকে সামনে রেখে তরমুজের ভালো দাম পাওয়াতে আশা করা যাচ্ছে এ বছর বাউফল উপজেলায় তরমুজ চাষিরা ১০০ কোটি টাকার উপরে তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।
আরিফুল ইসলাম সাগর/এমজেইউ