ত্রাণ নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ চান উপকূলবাসী
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ চর আন্ডা এলাকার বাসিন্দা সুমন ফকির। তিনি বলেন, সেই ছোট থেকে পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি আমরা। সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেন। আর কিছু চাই না। শুধু সুমন নয়, একই দাবি উপকূলের অন্যান্য বাসিন্দাদেরও।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পটুয়াখালীতে আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে পটুয়াখালীতে রাস্তাঘাট, গাছপালা, বেড়িবাঁধ, মাছের ঘের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোববার (৩০ মে) সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধানরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা প্রদান শুরু করা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ২৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। ৪ হাজার ৫৯৩টি বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে। পরিপূর্ণ হিসাব জানতে আগামী তিন কর্মদিবস সময় প্রয়োজন।
বাউফল উপজেলার চন্দ্রদীপ ইউনিয়নের চর মিয়াজানের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আক্কাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারের পানিতে আমাদের রাস্তা ভেঙে গেছে। এখন ঘর থেকে বের হতে হলে হাঁটু সমান কাদা। রাস্তায় চলাচল করতে কষ্ট হয়।
গলাচিপা উপজেলার ধলার চর গ্রামের আয়নাল আলী মাঝি বলেন, বেড়িবাঁধ দেওয়ার একটা ব্যবস্থা অইলে আমরা বর্ষাকালে শান্তিতে থাকতে পারতাম।
বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাস মোল্লা জানান, সরকারের কাছে দাবি চন্দ্রদ্বীপজুড়ে বেড়িবাঁধ দেওয়া হোক। এলাকাবাসীর চাহিদানুযায়ী তারা যেন দ্রুত এ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেন।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার চরবলইকাঠি গ্রাম এলাকার বাসিন্দা রজিব বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত না হানলেও জোয়ারের পানিতে আমাদের ফসলি জমি, মাছের ঘের, গরুর খামারের ক্ষতি হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, উচ্চ জোয়ারের পানিতে ৭ হাজার ৮৫টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মাছ, পোনাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নিয়ে ৫৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পটুযাখালীর গলাচিপার পাটুয়া গ্রাম এলাকার বাসিন্দা কোয়েল বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বাতাস আর জোয়ারের পানিতে আমাদের এলাকার নদীপাড়ের বহু মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই ভেঙে গেছে।
পটুয়াখালী বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, মাত্র জোয়ারের পানি নামল। এরপর মাঠকর্মীরা কাজ করে আমাদের রিপোর্ট দিবে। এতে আরও ৭ দিন সময় লাগবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অবগত রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ৬৫ হেক্টর জমির মরিচ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭.৫ হেক্টর জমির তিল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১৪.২৫ হেক্টর জমির তিল আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯০ হেক্টর জমির শাকসবজি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ৮১০ হেক্টর জমির শাকসবজি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৫০ হেক্টর জমির পান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে জেলায় ৫৯ লাখ ১ হাজার ৫৭৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
পটুয়াখালী এলজিইডির সিনিয়র নির্বাহী প্রকৌশলী জুগল কৃষ্ণ মন্ডল কৌশিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় ১৫৬.১৪ কিলোমিটার, বাউফল উপজেলায় ২২১.২৪ কিলোমিটার, দশমিনা উপজেলায় ২৬.৪৮ কিলোমিটার, গলাচিপা উপজেলায় ১৬৯.৭২ কিলোমিটার, দুমকী উপজেলায় ৩১.৬৪ কিলোমিটার, রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৭১.৯৯ কিলোমিটার এবং মির্জাগঞ্জ উপজেলায় ৫০.৬০ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে ৮ লাখ ১৩ হাজার ১০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. হালিম সালেহীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
মহিব্বুল্লাহ্ চৌধুরী/এসপি