ধর্ষণ মামলার বাদীকে হত্যার অভিযোগ, ৩ দিনেও শনাক্ত হয়নি হত্যাকারী

বরগুনায় মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার বাদী বাবা মন্টু চন্দ্র দাসকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করছেন। তবে ঘটনার তিন দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করলেও অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাত ৮টার দিকে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান ঢাকা পোস্টকে এসব বিষয় জানান। এ সময় ঘটনাটি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করতে সময় প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
গ্রেপ্তারকৃত তিনজন হলেন—অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত আসামি সৃজীব চন্দ্র রায়ের বাবা শ্রীরাম রায়, সৃজীবের সহযোগী কালু এবং রফিক। এ মামলার একমাত্র এজাহারভুক্ত আসামি সৃজীব রায়সহ গ্রেপ্তার সবাই আদালতের নির্দেশে বর্তমানে কারাগারে আছেন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে বরগুনা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালিবাড়ি করইতলা নামক এলাকার নিজ বাড়ির পেছন থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে বুধবার বিকেলে বরগুনা সদর থানায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
অপরদিকে, মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে বিচার চেয়ে দায়েরকৃত মামলার বাদী বাবাকে হত্যার অভিযোগ ওঠায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিনে নিহত মন্টুর বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, দেড় মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে নির্বাক হয়ে বসে আছেন মন্টুর স্ত্রী। চার বছর ও ১০ বছর বয়সী দুই মেয়ের চোখে বাবাকে হারানোর শোক। আর একটু পরপরই ছেলের শোকে চিৎকার করে উঠছেন স্বামীহারা মন্টুর বৃদ্ধা মা। বাড়িতে ভিড় করছেন স্বজনরা, সান্ত্বনা দিচ্ছেন তাদেরকে। তবে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি কীভাবে চলবে তার উত্তর দিতে পারছেন না কেউ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বরগুনা পৌর শহরের কালিবাড়ী এলাকার নিজ ঘরের পেছনের একটি ঝোপঝাড় থেকে মন্টু চন্দ্র দাসের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার ছয় দিন আগে ৫ মার্চ সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে স্থানীয় সৃজীব চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। পরে ওই দিনই এ মামলায় অভিযুক্ত সৃজীবকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
নিহতের স্ত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের পর আমার স্বামী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে যে দিন মামলার তারিখ তার আগেই রাতে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সন্দেহ হয় ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তের স্বজনরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। স্বামীকে হারিয়ে এখন সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে তা জানি না।
নিহতের বোন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেয়ের মুখ থেকে ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা শুনে তাকে নিয়ে থানায় গিয়ে অভিযুক্ত সৃজীবের নামে মামলা দায়ের করা হয়। পরে অভিযুক্তের বাবা শ্রীরাম আমার ভাইয়ের সঙ্গে মিলে যাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় আলাপ-আলোচনা করেন। অন্যথায় ছেলে ছাড়া পেলে ভুক্তভোগীদের দেখিয়ে দেওয়ার হুমকি-ধমকিও দেন বলে জানন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের এলাকায় কোনো শত্রু নেই। মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়ায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তরাই তার একমাত্র শত্রু। আর এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার বিকেলে ভাইয়ের সঙ্গে মিলে যাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগের পরই রাতে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেওয়ান জগলুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত মন্টুর স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত চলমান আছে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো আসামি এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় মামলাটি তদন্তের জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। তবে সন্দেহভাজন আটক চারজনের মধ্যে তিনজনকে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বাকি একজনের এ বিষয়ে কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় মুসলেকা রেখে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
মো. আব্দুল আলীম/এএমকে