চিঠি ভাইরাল, পেশকার-পিওনকে ঘুষ দেওয়ার দর নির্ধারণ

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির একটি সভার ‘রেজুলেশনের অংশ বিশেষ’ নামে একটি পত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই পত্রে আদালতের পেশকার, পিয়নকে কোন কাজে কত টাকা ‘ঘুষ’ দিতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গত ৬ মার্চ দুপুর ২টার দিকে সভাটি অনুষ্ঠিত হয় শরীয়তপুরের অ্যাডভোকেট সুলতান হোসেন মিয়া সভাকক্ষে। ভাইরাল হওয়া ওই পত্রে আদালত-সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনকে কোন কাজে কত অর্থ দেওয়া হবে—এমন অন্তত চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পত্রটিতে স্বাক্ষর করেন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান। পত্রটি বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সভার নজরে আসে এবং অনেকেই সমালোচনা করেন।
ভাইরাল হওয়া ওই পত্রে দেখা যায়, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেমের সভাপতিত্বে গত ৬ মার্চ নির্বাহী কমিটির সভা-১ অনুষ্ঠিত হয়। সভা পরিচালনা করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান।
বিজ্ঞাপন
পত্রে সিদ্ধান্ত জানিয়ে লেখা হয়, সিদ্ধান্ত নং-(২) পেশকার/পিয়নকে সি, আর ফাইলিং এ একশত টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত নং-(৩) এ যে কোনো দরখাস্তে জি, আর/সি, আর একশত টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত নং-(৪) এ জামিননামা দাখিলের খরচ মামলা প্রতি একশত টাকার নিচে না এবং দুইশত টাকার বেশি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত নং-(৫) এ গারদখানায় ওকালতনামায় স্বাক্ষরে একশত টাকা, সিভিল ফাইলিংয়ে সর্বোচ্চ দুইশত টাকা ও হলফনামায় একশত টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
দেশের মানুষের ন্যায়বিচারের সর্বশেষ ভরসাস্থল আদালতের পেশকার ও পিওনকে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘুষ দেওয়ার এমন পত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনরা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শরীয়তপুরের নেতা ইমরান আল নাজির তার ফেসবুক পেজে পত্রটি সংযুক্ত করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ঘুষের সার্টিফিকেট দিলো শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।'
শাহীন আহমেদ শান নামের এক ব্যক্তি ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে তিনিও একই কথা লেখেন।
পত্রটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঘুষ দেওয়ার লাইসেন্স দিইনি বরং ঘুষ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা যেসব কাজের কথা উল্লেখ করেছি, এসব কাজে আগে অনেক টাকা দিতে হতো। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে এটি কমালাম। ভবিষ্যতে কমিয়ে এটিকে জিরোতে নামাবো।
জহির হোসেন/এএমকে