আপত্তিকর ভিডিওর জেরে হত্যা, একজনের মৃত্যুদণ্ড আরেকজনের যাবজ্জীবন

নেত্রকোণায় মো. মিলন মিয়া নামের এক যুবককে গলা কেটে হত্যার দায়ে একজনকে ফাঁসি ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এই রায় দেন।
বিজ্ঞাপন
ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মো. শাহজাহান মিয়া (২১) কলমাকান্দা উপজেলার কালাইকান্দি গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের ছেলে এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আবুল বাশার একই উপজেলার হরিনাকুণ্ড গ্রামের মুনসুর আলীর ছেলে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিহতের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কলমাকান্দা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার ছোট ভাই মিলন মিয়া কালাইকান্দি প্রাইমারি স্কুল মোড়ে দীর্ঘদিন যাবত কাপড়ের দোকান, টেইলার্স ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করে আসছিলেন। হত্যা মামলার মূল আসামি শাহজাহান মিয়াও কম্পিউটার, বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতেন এবং তাদের দুজনের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। ঘটনার আনুমানিক ২-৩ দিন পূর্বে মিলন শাজাহান মিয়ার কাছে তার পাওনা দেড় লাখ টাকা ফেরত চাইলে তিনি টাকা না দিয়ে নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করে টাকা দিবেন বলে জানায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১১টায় মিলন মিয়া খাওয়া-দাওয়া করে প্রতিদিনের মতো ঘুমিয়ে পড়ে বলে জানায় তার পরিবার। তবে পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে শাহজাহান মিয়ার মা সাজেদা খাতুন চিৎকার শুরু করেন। তিনি জানান, তার ছেলে শাহজাহান মিয়া নিখোঁজ এবং তার বাড়িতে ছেলের ব্যবহার করা রক্তমাখা জামা কাপড় পাওয়া গেছে। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। তখন সবাই ঘটনাস্থল মো. শাজাহানের দোকানের পেছনে গিয়ে রফিকুল ইসলাম নামের একজনের শুকনো ডোবায় মিলনের মরদেহ দেখতে পান। পুলিশ মিলনের মরদেহ উদ্ধার এবং সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল প্রেরণ করে।
বিজ্ঞাপন
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, মামলার এজাহারে টাকা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে মর্মে মামলা হলেও আসামিরা তাদের জবানবন্দিতে জানান, মূলত মেয়েঘটিত একটি বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। মিলন মিয়া, শাজাহান মিয়া ও আবুল বাশার মিলে একজন যৌনকর্মীকে ভাড়া করেন। ওইদিন মিলন মিয়া ওই মেয়েসহ একটি ভিডিও করে রাখে। যে ভিডিওটি মিলন ফেসবুকেও আপলোড করেছিল। বিষয়টি শাজাহান ও আবুল বাশার জানতে পারে। ভিডিওটি ডিলিট করতে বললেও মিলন ডিলিট করেনি। ঘটনার দিন রাতে শাহজাহান মিয়া ও আবুল বাশার মিলনের দোকানে গিয়ে দেখতে পান মিলন ওই ভিডিওটি দেখছেন। এ অবস্থায় তাদের মধ্যে ভিডিও ডিলিট করা নিয়ে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে শাজাহান মিয়া তার কাছে থাকা চাকু দিয়ে মিলনের গলা কেটে হত্যা করে।
ওইদিন মিলনের বড় ভাই মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে কলমাকান্দা থানায় মামলা দায়ের করলে তদন্ত শেষে পুলিশ পরের বছর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। দীর্ঘ শুনানিতে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ এ রায় দেন।
বিজ্ঞাপন
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল হাশেম। আর
আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে মো. শাজাহান মিয়ার পক্ষে অ্যাডভোকেট এম. নজরুল ইসলাম খান এবং আসামি আবুল বাশারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বিশ্বাস উজ্জ্বল।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/এমজেইউ