বালু ব্যবসায়ীদের থাবায় অস্তিত্ব সঙ্কটে নদী, নীরব প্রশাসন

অনিয়ন্ত্রিতভাবে নদী থেকে বালু ও মাটি উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভেঙে যাচ্ছে। এর ফলে নদীর নাব্যতা কমছে ও নদীর তীর ধসে যাচ্ছে। অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে সরকার বিভিন্ন সময় পদক্ষেপ নিলেও প্রশাসন একেবারেই নীরব। এখন ঠাকুরগাঁওয়ের ১৩টি নদীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
টাঙ্গন, শুক ও সেনুয়াসহ জেলার ১৩টি নদীর পানি শুকিয়ে জেগে উঠেছে চর। চর জেগে উঠায় এক শ্রেণি প্রভাশালীর নির্দেশে কখনো নদীর বালু আবার কখনো পার কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হরহামেশাই। এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার করে চলছে লাখ লাখ টাকার বালু বাণিজ্য।
অবৈধ বালু তোলার পেছনে রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। এই চক্রের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতারা। তারা অবৈধ বালু তোলার মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
আরও পড়ুন
ইজারাদারের তথ্য মতে, শুধু ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার টাঙ্গন, শুক ও সেনুয়া নদীর বিভিন্ন ঘাট থেকে অবৈধভাবে গড়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রাক্টর দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার বালু উত্তোলন করছে।
নদী তীরের মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের ব্যবসা। তারা বলছেন, নদীর ঘাটে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে টাকা নিয়ে যায়। রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা ঘাটে বসে থেকে পাহারা দেন কে কখন ঘাটে আসে।
সদর উপজেলার মোহাম্মদপুর, কৃস্টপুর, নারগুন, সেনুয়াসহ বেশকয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামীণ জনপদের ভেতর দিয়ে একের পর এক ট্রাক্টর নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র। বছরের পর বছর ধরে এভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এলাকার প্রভাবশালীরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এলাকার প্রভাবশালীর নির্দেশে নদীর পার থেকে বালু ও মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন অসাধু চক্রটি। ভয়ে কেউ কথা বলতে পারছে না। আর প্রশাসন দেখেও যেন না দেখার ভান করছে। বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিনিয়ত ভাঙছে তীর, নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভয়ে কেউ বাধা দেয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ বালু ও মাটি উত্তোলন। এ বালু দিয়ে বাড়ি, রাস্তাসহ বিভিন্ন ভরাট কাজের ব্যবসা করা হচ্ছে। টাঙ্গন নদীতে গভীর করে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলনের ফলে প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে তার খেসারত দিতে হয় নদী ধারের জমির মালিকদের। ক্ষতি হয় ফসলি জমির। অনেক গাছপালা যায় নদীগর্ভে।
নুরু হক নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, গুটিকয়েক লোকের স্বার্থ হাসিলের জন্য এভাবে সর্বনাশ মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষতি রোধ করতে হবে। অবিলম্বে এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। প্রশাসনের কেউ এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে কি না, সেটা তদন্ত করে বের করতে হবে।
আলমগীর হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, জেলা প্রশাসনের কাজ থেকে ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পরেছেন বিপাকে। কারণ অবৈধভাবে যারা বালু তুলছেন তারা বিক্রি করছে কম দামে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে বৈধ ইজারাদারদের। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কেউ ইজারা নিবে না। সরকারের ঘরে যা টাকা যেত তাও বন্ধ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম জানান, যারা অবৈধভাবে বালু বা মাটি উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বৈধভাবে ইজারার সংখ্যা বৃদ্ধিও পরিকল্পনা রয়েছে। তাহলে অবৈধভাবে বালু বা মাটি তোলা বন্ধ হয়ে যাবে।
রেদওয়ান মিলন/এআইএস