চোখের জলে ভাসি, বানের জলে ডুবি
‘চোখের জলে ভাসি, বানের জলে ডুবি’; ‘যৌবন ফুরিয়ে গেল, পেটের ক্ষুধা রয়ে গেল’— এমন প্লে-কার্ড নিয়ে নিজেদের দাবি তুলে ধরে খুলনায় মানববন্ধন করেছেন যৌনকর্মীরা । শনিবার (২৯ মে) দুপুরে দাকোপ উপজেলার বানিয়াশান্তা পতিতাপল্লিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
যৌনপল্লি এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের দাবিতে সেক্সচুয়াল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ও নারী জাগরণী সংঘ এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
মানবন্ধনে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো কেবলমাত্র ত্রাণ নয়, পশুর নদী উপকূলে বানিয়াশান্তায় টেকসই বাঁধ চাই, যৌনপল্লির নারীদের জন্য স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, অক্ষম যৌনকর্মীদের জন্য বয়স্ক ভাতা, সারাদেশের সরকারি তালিকাভুক্ত যৌনকর্মীদের জন্য মাসিক রেশন, শিশুদের জন্য অতি সত্বর শেল্টার হোম ও বয়স্ক নারীদের জন্য সরকারি বাসস্থান চাই।
পশুর নদী তীরে গড়ে ওঠা এ পল্লির বাসিন্দারা আজ বড় অসহায়। করোনা পরিস্থিতিতে একটা দীর্ঘ সময় ধরে তারা যেমন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন, তেমনি গতব ছরের আম্পানের ন্যায় এবারের ইয়াস ঝড়ের প্রভাবে তারা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের উদ্যোগে তারা সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি নিয়ে আজকের মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই পেশায় আমরা কেউ ইচ্ছা করেই আসিনি। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পড়ে আমরা এখানে এসেছি। আমাদের কি কোনো সামাজিক মর্যাদা নাই? সমাজের অনেক মানুষ এখানে আসে, আবার কাজ শেষে চলে যায়, কিন্তু আমাদের কথা কেউ মনে রাখেন না। আমরা যেন সমাজের ভাসমান শেওলা। আমাদের কথা কেউ ভাবে না।
তারা আরও বলেন, এই ঝড় জলোচ্ছ্বাসে আমরা বেঁচে আছি নাকি মারা গেছি সেই খবরও নেওয়ার কেউ নেই। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘর ভেঙে গেছে। রান্নার জন্য নেই কোনো ব্যবস্থা। আমাদের মধ্যে বয়স্কদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। শারীরিক সক্ষমতা হারানোর সঙ্গে সঙ্গে সে সমস্ত দিক থেকে হয়ে যায় অসহায়। পারে না গ্রামেও ফিরে যেতে। ফলে অতি কষ্টে পরের বাসায় কাজ করে, পানি টেনে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। অসুস্থ হলে সে পড়ে যায় মহাবিপাকে।
মানববন্ধনে সেক্সচুয়াল নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ও নারী জাগরণী সংঘ বানিশান্তা সভাপতি রাজিয়া বেগম বলেন, দাকোপ উপজেলার বানিয়াশান্তা ইউনিয়নের বানিয়াশান্তা পশুর নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাস করছি। যখনই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে, তখনই সেটা প্রথমে আমাদের উপরে আঘাত হানে। আমাদের নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তাই আমাদের নিজস্ব আবাসন ব্যবস্থা ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন নারী জাগরণী সংঘের সেক্রেটারি শিউলি খান, সহসভানেত্রী লাভলী, সহসেক্রেটারি রোজিনা, কোষাধ্যক্ষ আনজুয়ারা।
মোহাম্মদ মিলন/এমএসআর