ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪

ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে গ্রুপ খোলাকে কেন্দ্র করে সিনিয়র ও জুনিয়রদের দুই পক্ষের সংঘর্ষের চারজন আহত হয়েছেন। আহতরা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পী নগরী এলাকায় অবস্থিত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলে। যার নাম জারুয়া গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্যরা একটি গোপন বৈঠক করে। বৈঠকে তারা সপ্তম সেমিস্টারে শিক্ষার্থীদের অর্থাৎ সিনিয়র ভাইদের তারা মান্য করবে না ও তাদের কথা শুনবে না এবং জুনিয়রদের নিয়ন্ত্রণেই চলবে ক্যাম্পাস। বৈঠক চলাকালে এমন একটি ভিডিও ক্যাম্পাসের সপ্তম সেমিস্টার শিক্ষার্থীরা পাই। এ ভিডিও দেখে সপ্তম সেমিস্টারের (সিনিয়র গ্রুপ) শিক্ষার্থীরা অপমানবোধ মনে করে। আজ ক্যাম্পাসে সকালে নবীনবরণ অনুষ্ঠান হয়। নবীনবরণ অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যার দিকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে দুই গ্রুপের মধ্যে কথাকাটাকাটি হলে এক পর্যায়ে রাত ৯টার দিকে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে প্রথম সেমিস্টার অর্থাৎ জুনিয়র গ্রুপ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সিনিয়রদের ধাওয়া দেয়। এতে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় চারজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে আবারও শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে এই সংঘর্ষ। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সপ্তম সেমিস্টার শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। এই আলোচনা চলে দেড় ঘণ্টা। আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় যে-সব শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে ও সংঘর্ষে অংশ নিয়েছে তাদের দুই দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর সেনাবাহিনী উপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাসা ও মেসে ফিরে যায় তারা।
সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে জানায়, প্রথম সেমিস্টারের ছাত্ররা মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওয়াশ রুমে যায়, ধূমপান করে। বড়দের সম্মান করে না। এর আগের আমাদের ক্যাম্পাসে এমন ঘটনা কখনই ঘটেনি। তাদের ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমাদের ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক দল নেই, গ্রুপিং নেই। তারা এসে পাঁচ বিভাগকে এক করে জারুয়া গ্যাং নামে একটি গ্রুপ খোলে। যেটা কিশোর গ্যাং। আমরা এটার বিরোধিতা করি এবং শাসন করি।
আরও পড়ুন
তারা আরও বলেন, আজ আমাদের ক্যাম্পাসে নবীনবরণ ছিল। আমরা জানতে পারি তারা আমাদের সঙ্গে গোণ্ড গোল করবে। এরই মধ্যে তারা রামদা, চাপাতি, চেইন নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। অনুষ্ঠান শেষে আমরা বের হচ্ছি এসময় তারা আমাদের মারধর শুরু করে। আমরা তখন তাদের ধাওয়া দেয়। আশা করছি আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রধান এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। অন্যথায় আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ না।
ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। আমরা শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করি এবং তাদের সকল কথা শুনি। তাদের দাবি হলো (প্রথম সেমিস্টার) শিক্ষার্থীদের এই কলেজ থেকে বদলি করে দিতে হবে। তাদের স্ব-স্ব অভিভাবকদের কলেজে ডেকে আনতে হবে। আমরা আগামী শনিবারের মধ্যে যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আপাতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে তেমন বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি। কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রেদওয়ান মিলন/এমএন