দিনমজুর-সাংবাদিক-দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিএনপি নেতার মামলা

বরিশালের উজিরপুরে পরিত্যক্ত জঙ্গল থেকে বোমা সদৃশ বস্তু উদ্ধারের ঘটনায় ৭৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার বামরাইল ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ খান বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা ছাড়াও বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মী, দিনমজুর ও দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধিকে আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, নিজ দলের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে আসামির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে তাদের।
মামলার এজাহারে যা আছে
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলায় অর্ন্তভুক্ত আসামিরা সকলেই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের নেতাকর্মী। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে সংঘবদ্ধভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে।
গণঅভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকার বিরোধী এবং আওয়ামী লীগের নির্দেশে সড়ক অবরোধ করাসহ বিশৃঙ্খলা তৈরি করে আতঙ্ক তৈরি করে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বামরাইল ইউনিয়নের পূর্ব ধামসর সোনার বাংলা বাজারে সড়ক অবরোধ করতে গিয়ে বর্তমান সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। আসামিরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গাছে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ঠিক সেই সময়ে মোটরসাইকেলে ইচলাদি যাওয়ার জন্য রওয়ানা করলে তাকে কলার ধরে নামিয়ে মারধর করে। তার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিতে চায়। বাদী সবুজ খানের চিৎকারে মামলার সাক্ষীরা উপস্থিত হলে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ সময় দুটি পেট্রোল বোমা জ্বলন্ত অবস্থায় ফেলে এবং আরো কিছু বোমা ছড়িয়ে ছিটিয়ে, ককটেল বিস্ফোরণ করে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে উজিরপুর থানার উপপরিদর্শক জ্যোর্তিময় হালদার ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনটি ককটেল ও অর্ধ বিস্ফোরিত দুটি পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেন।
আসামি দিনমজুর, সাংবাদিক ও বিএনপির কর্মী
মামলার মোট ৭৫ জন আসামির মধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। এর মধ্যে ১৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে দৈনিক দেশ রূপান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি শাকিল মাহমুদ বাচ্চুকে। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকলেও স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়িক বিরোধ থাকায় জয়শ্রী পান আড়তের মালিক আনোয়ার মল্লিককে করা হয়েছে ৪২ নম্বর আসামী। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন ইউনিয়ন নেতা হাবিবুর রহমানের ছেলে বর্তমানে সক্রিয় বিএনপির কর্মী মিলন ফকিরকে করা হয়েছে ৪৩ নম্বর আসামি। ৫২ নম্বরে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা জাফরুল নাদিমের নাম। ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের ভাই দিনমজুর সেলিম খানকে করা হয়েছে ৬৫ নম্বর আসামি।
দিনমজুর সেলিম খান বলেন, মামলার ২ নম্বর সাক্ষী সৈয়দ ইউসুফের সাথে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে। আমাকে এলাকা ছাড়া করতে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত করে মামলার আসামি করেছে।
ছাত্রনেতা নাদিম হাওলাদার বলেন, আমার পুরো পরিবার বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আওয়ামী লীগের আমলে সামনের সাড়িতে থেকে আমরা বিএনপির রাজনীতি করেছি। আর আওয়ামী লীগের পতনের পর ককটেল বিস্ফোরণের জন্য যাব, এটা কতটা হাস্যকর।
তিনি বলেন, উজিরপুরের পৌর বিএনপির এক নেতার সাথে আমাদের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সেই বিরোধের সূত্র ধরে আমাদের আসামি করা হয়েছে।
দৈনিক দেশ রূপান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি শাকিল মাহমুদ বাচ্চু বলেন, বাজারে আমার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। এটি দখলের জন্য অনেকদিন ধরেই একটি পক্ষ চেষ্টা চালিয়ে আসছে। আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলাম না, সুবিধাও নেইনি। বরং আওয়ামী লীগের আমলে ওই দলের নেতাকর্মীরা আমার ওপর হামলা-মামলা করেছে। আর এখন আমাকে আওয়ামী লীগ বানানো হচ্ছে।
মামলার বাদী ও সাংবাদিকের কথোপকথন ফাঁস
ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুজ খান মামলার বাদী হলেও তিনি ঘটনা সর্ম্পকে অবহিত নন বলে ১৮ নম্বর আসামী সাংবাদিক শাকিল মাহমুদ বাচ্চুর কাছে স্বীকার করেছেন। এমন একটি অডিও রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। কথোপকথনে উঠে আসে তারা দুজনেই বন্ধু। সবুজ খান স্বীকার করেন, আমাকে নামেমাত্র বাদী করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব কিছুই উপজেলার বড় বড় নেতারা করেছেন। আমার আসলে এখানে কিছুই করার ছিল না।
উজিরপুরর পৌর শহর ও শিকারপুরের লোকজন মিলেই বাচ্চুকে আসামি করে উল্লেখ করে বলেন, তোকে (বাচ্চু) আসামি করায় আমাদের দুজনের বন্ধুত্ব থাকে না। কিন্তু আমি কি করবো বল? তারপরও সাক্ষাতে কথা বলিস, একটা সিস্টেম করে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য সবুজ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি মামলা গ্রহণকারী উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ছালামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছুটিতে থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ওসির মুঠোফোন উপ-পরিদর্শক জ্যোর্তিময় হালদার রিসিভ করে জানান, মামলাটি নিয়ে ওসির সাথে কথা বলে আপনাকে (প্রতিবেদক) জানাবো। ওসি স্যার ছুটিতে থাকায় দু-একদিনে কথা বলতে পারবেন না।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর