জন্মের পরই নবজাতক পেল জন্ম নিবন্ধন কার্ড, বাবা পেল পুরস্কার
ভূমিষ্ঠ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাখা হয় নবজাতকের নাম। এর পরপরই ওই নবজাতক কন্যার বাবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে তার জন্ম নিবন্ধন করেন। কন্যার জন্ম নিবন্ধন করার সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার হিসেবে পান ২০০ টাকা।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্র বাড়িয়া হাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, ক্ষুদ্র বাড়িয়া হাটি গ্রামের ভ্যানচালক রুস্তম আলীর (৪৫) স্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এরপর দুপুরেই নবজাতক কন্যার নাম রাখা হয় জান্নাতুল আক্তার রোজা। কন্যার জন্মের পর রুস্তমের মনে পড়ে যায় জন্ম নিবন্ধন করার কথা। বিকেলে তিনি ভ্যান চালিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে আসেন এবং নবজাতক কন্যার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করেন। ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নাজমুল ইসলাম তার হাতে শিশুটির জন্ম নিবন্ধনের কার্ড তুলে দেন।
এ সময় দিনে দিনে নিবন্ধন করায় চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান রুস্তম আলীর হাতে পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০০ টাকা ও অভিনন্দনপত্র তুলে দেন। এ সময় সচিব ছাড়াও এলাকার বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বাবু আরও জানান, এলাকার শিশুদের জন্ম নিবন্ধনে উৎসাহিত করতে এমন ব্যাতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। তার ইউনিয়নে শতভাগ জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বাস্তবায়নে এবং জনসাধারণকে জন্ম নিবন্ধনে উৎসাহিত করতে চলতি বছরের শুরুতে ঘোষণা দিয়েছিলেন সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার দু-একদিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করলেই বাবা-মাকে উপহার দেওয়া হবে। তার এই উদ্যোগে জন্ম নিবন্ধনে বেশ সাড়া পড়েছে।
সন্তান জন্মগ্রহণ করলেই সঙ্গে সঙ্গে নাম রেখে বাবা ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসেন জন্ম নিবন্ধন করতে। ধনী-গরিব বিবেচনায় নয় যারাই সঠিক সময়ে শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করেন তাদেরই নগদ অর্থ, শাড়ি-লুঙ্গিসহ নানা উপকরণ দেওয়া হয়। ফলে গত ৫ মাসে শতাধিক শিশুর জন্ম নিবন্ধন হয়েছে যথা সময়ে। সাধারণ মানুষের মাঝেও বেশ উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। তিনি এই ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।
ভ্যানচালক রুস্তম আলী জানান, লোকমুখে তিনি শুনেছেন সন্তান জন্ম গ্রহণের দিন অথবা দুই-একদিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন করলে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। তাই বৃহস্পতিবার সকালে তার মেয়ে জন্ম গ্রহণ করলে দুপুরের মধ্যেই স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নাম রাখেন জান্নাতুল আক্তার রোজা। পরে বিকেলে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। এ সময় চেয়ারম্যান তার শিশুর জন্মনিবন্ধন শেষে কার্ড, অভিনন্দনপত্র আর পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০০ টাকা প্রদান করেন।
নাটোর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম রাব্বী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেয়ারম্যানের এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। চেয়ারম্যানের এই উদ্যোগ মানুষকে জন্ম নিবন্ধনে অনুপ্রাণিত করছে। জন্ম নিবন্ধনে ইতোমধ্যে ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন অনেকটা সাড়া ফেলেছে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রক্রিয়া পুরো জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য নাটোর জেলা বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে এবং জেলার মধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলা প্রথম স্থানে রয়েছে।
তাপস কুমার/আরএআর/জেএস