বন্যায় সর্বস্ব হারানো তাইজউদ্দিনের পাশে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন

চোখের সামনে উথালপাতাল পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল ১১০০ হাঁস, ধসে পড়ছিল মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁইটুকুও। চার মেয়েকে বুকে জড়িয়ে স্ত্রী মিনারা বেগম যখন অসহায় কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন, তখন তার কিছু বলার ছিল না। চোখের সামনে গড়া সংসারটা মুহূর্তেই বিলীন হয়ে গেল তাইজউদ্দিনের।
একসময় তাইজউদ্দিনের জীবনটা ছিল খুবই সুন্দর। শেরপুরের ঝিনাইগাতীর নলকূড়া ইউনিয়নের গজারীপাড়া গ্রামে ছোট্ট এক খামারে ১১০০ হাঁস ছিল তার। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে সংসার চলত স্বচ্ছলভাবেই। চার মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই কাটছিল দিন। বড় মেয়ে এবার এসএসসি দেবে, তাকে ঘিরেও ছিল অনেক স্বপ্ন।

কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেরপুরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা কেড়ে নিয়েছে সব। এক রাতের ব্যবধানে ভেঙে গেছে তাইজউদ্দিনের স্বপ্ন, সংসারের একমাত্র আয়ের পথ। বানের জলে একে একে ভেসে যায় সব হাঁস, চোখের সামনে বিলীন হয়ে যায় মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই মাটির ঘরটুকুও। ডিম বিক্রি করে চলা সেই খামারটা এখন কেবলই স্মৃতি। নিঃস্ব হয়ে কোথায় যাবেন, কীভাবে আবার শুরু করবেন কোনো দিশাই ছিল না তার। সর্বস্ব হারিয়ে যখন দিশেহারা, তখন আশার আলো হয়ে পাশে দাঁড়ায় আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। শায়খ আহমাদুল্লাহর নেতৃত্বে তাইজউদ্দিনের স্ত্রী মিনারা বেগমের নামে গড়ে উঠছে দুই কক্ষ, বারান্দা আর রান্নাঘরসহ সব সুবিধাসম্পন্ন এক নিরাপদ আশ্রয় নতুন পাকা বাড়ি। ইট গাঁথার শব্দে নতুন জীবনের স্বপ্ন বুনছেন তাইজউদ্দিন। কয়েক দিন পরই উঠবেন নতুন ঘরে, যেখানে আবার শুরু করতে পারবেন নতুন জীবন।
‘বন্যার আগে আমাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু এক রাতে সব শেষ হয়ে গেল। আল্লাহ যেন হুজুরকে (আহমাদুল্লাহ) দুনিয়া ও পরকালে উত্তম প্রতিদান দেন’, বলতে বলতে চোখের কোণে জল জমে তাইজউদ্দিনের।
তার স্ত্রী মিনারাও আবেগাপ্লুত হয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই দুর্দিনে যদি আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন পাশে না দাঁড়াত তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হতো। আল্লাহ যেন হুজুরকে জান্নাতে এমনই একটি ঘর উপহার দেন।
তাইজউদ্দিনের স্বপ্ন ভেঙে পড়তে দেখেছেন স্থানীয়রাও, আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নও দেখছেন তারা। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মানবিক এই উদ্যোগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সবাই। কেউ কেউ বলছেন, এভাবেই যদি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়, তাহলে সমাজে কেউ নিঃস্ব থাকবে না।
বন্যার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে, কিন্তু তাইজউদ্দিনের পরিবার এখন আশার আলো দেখছে। হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো যেন নতুন করে ফিরে আসছে তাদের জীবনে।
মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এমজেইউ