বছরজুড়ে উপেক্ষিত, একদিনের আয়োজনে সরগরম

বছরজুড়ে অবহেলিত হলেও প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সরগরম থাকে ভাষা শহীদ আবদুস সালামের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সালাম নগর। অন্যান্য সময় পাঠকশূন্য ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে ফেব্রুয়ারি মাস এলে চলে নানা কর্মযজ্ঞ।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গেল বছরের আগস্টে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায় বই, তাকসহ গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র। পর্যাপ্ত বুক শেলফ না থাকায় অনেকগুলো বই টেবিলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় সেখানে পাঠকের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। আবার দীর্ঘসময় ধরে নেই নতুন কোনো বইও। এ ছাড়া জাদুঘরে শহীদ সালামের একটি ছবি ছাড়া আর কোনো স্মৃতিচিহ্ন নেই।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই গ্রামের নাম সালাম নগর করা হয়। প্রায় ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদ সালামের বাড়ির অদূরে নির্মাণ করা হয় ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। ২০০৮ সালের ২৬ মে স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
বিজ্ঞাপন
ইফতেখার হোসেন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঠাগারে ২০১৮ সালে কিছু বই দেওয়া হয়েছিল। তারপর দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও নতুন বই দেওয়া হয়নি। একই বই পড়তে তো আর মানুষ সব সময় আসবে না।
বিজ্ঞাপন
সাজ্জাদ নামের আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি এ স্থানটি আরও জনসম্পৃক্ত করতে উদ্যোগ নেয় তাহলে শহীদের আত্মত্যাগ সমুন্নত হবে। অন্যান্যবার কিছু আলোকসজ্জা থাকলেও এবার একুশের প্রথম প্রহরে এখানে মোবাইলের লাইট দিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতা আমাদের জন্য লজ্জার।
ফধল আদনান নামে আরেক শিক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রন্থাগারটি চেনার কোনো উপায় নেই। ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে যদি একটি তোরণ নির্মাণ করা হয় তাহলে মানুষ ভাষা শহীদ আব্দুস সালামের গ্রামের বাড়ি সহজে চিনতে পারবে। এছাড়া সড়ক সংস্কার, সড়কবাতি লাগানোসহ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরের প্রাণ ফেরানো সম্ভব।
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক লুৎফুর রহমান বাবলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার সময় বই ও তাক পানিতে ডুবে এখানকার জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। তখন রোদে শুকিয়ে বইগুলো কিছুটা পাঠযোগ্য করা গেলেও তাক নষ্ট হওয়ায় অগোছালোভাবে পড়ে আছে।
শহীদ আবদুস সালামের ছোট ভাই সুবেদার (অব.) আবদুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই সবাই আমাদের খোঁজখবর নেন। বর্তমানে আমি অসুস্থ। এ পরিবার থেকে আমার মেয়ে খাদিজাকে একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। কিন্তু কারও কাছ থেকেই কার্যকর সহযোগিতা না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঠাগারে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যে জেলা পরিষদে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেখানকার ফার্নিচার, বইসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের লক্ষণপুর গ্রামে জন্ম হয় আবদুস সালামের। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সালাম সবার বড় ছিলেন।
তারেক চৌধুরী/এমজেইউ