একুশের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ঢল

বিভাগীয় মহানগরী রংপুরে একুশের প্রথম প্রহরে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন সর্বস্তরের মানুষ।
বিজ্ঞাপন
এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করতে আসা হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে, শহরের টাউন হল মাঠ, পাবলিক লাইব্রেরি, শহীদ মিনার চত্বরসহ আশপাশের সড়ক। এ সময় নেপথ্যে বাজছিল অমর একুশের কালজয়ী গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।’
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন
পরে একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২টা এক মিনিট থেকে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি মো. আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী, রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, জেলা পুলিশ সুপার মো. আবু সাইম ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন।
বিজ্ঞাপন
পরে রংপুর প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব, সিটি প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, টিসিএসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন একে একে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
এক ঘণ্টার ব্যবধানে রাতের প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুলে ভরে উঠে শহীদ মিনার। ছোট বড় বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঢলে মুখরিত ছিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহর।
পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন হচ্ছে। এই দিনটি আমাদের জন্য একটি অন্যতম দিন। ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে একমাত্র আমরাই গড়েছি। এই দিনে রংপুরে রাতের মতো সকালেও মানুষের ঢল নামবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন সেটা আমরা করেছি।
তিনি আরও জানান, ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে উৎসবগুলোতে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। আমরা সেটা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, জুলাই বিপ্লবের পর পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি যেন শহীদ দিবসের কোনো শোভাযাত্রা এবং জমায়েত স্থলে প্রবেশ করে কোনো ধরনের অরাজকতা তৈরি করতে না পারে সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে। শহীদ মিনারসহ জমায়েত স্থলগুলোতে নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। কেউ ন্যূনতম কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষেরা জানান, প্রতি বছর মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের পবিত্র রক্তস্রোতের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের গৌরবগাঁথা। অমর একুশে বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। ১৯৫২ সালের এই দিনে শহীদদের শাণিত ধারায় যে আলোকিত পথের উন্মোচন ঘটেছিল, সেই পথ ধরে এসেছিল স্বাধীনতা। আজ আত্মমর্যাদায় সমুন্নত এক জাতি হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অন্তহীন প্রেরণার নাম একুশে ফেব্রুয়ারি।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে রংপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ভাষা শহীদ ও সংগ্রামীদের সংবর্ধনা প্রদান, আলোচনা সভা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতাসহ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান রয়েছে। এবার শহীদ মিনারে সব থেকে বেশি লোক সমাগম হবে বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এআইএস