২১শে ফেব্রুয়ারি রাতেও ফাঁকা, অপরিষ্কার শহীদ মিনার

বছরজুড়ে অযত্নে পড়ে থাকলেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয় সব শহীদ মিনার। কিন্তু এই চিত্র পুরোটাই ভিন্ন পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ৬০নং লতাচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেলায়।
বিজ্ঞাপন
অযত্ন-অবহেলায় সারা বছরের ন্যায় ২১শে ফেব্রুয়ারি রাতেও একই অবস্থা এই বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটির। কুয়াকাটা শহরের প্রাণকেন্দ্রের এই মিনার রয়েছে সুনসান। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘এটি ভুল হয়েছে আমাদের।’
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা ১ মিনিটে সরেজমিনে দেখা যায়, সুনসান ফাঁকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ, অন্ধকার মাঠের পাশে মিনারে নেই কোনো আলোর ব্যবস্থা। মিনারে পড়েছে শ্যাওলার আস্তরণ, অন্যদিকে পুরোনো রং খসে পড়ছে। ধুলাবালু ও ময়লাযুক্ত মিনার প্রাঙ্গণ পড়ে আছে অযত্ন ও অবহেলায়।
বিজ্ঞাপন
পর্যটন নগরী কুয়াকাটায় ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে থাকে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ছুটি উপলক্ষ্যে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসেছেন হাজার হাজার পর্যটক। কুয়াকাটার প্রাণকেন্দ্রের এই শহীদ মিনারে কোনো আয়োজন না থাকায় পর্যটক ও স্থানীয়রা অন্য শহীদ মিনারগুলোতে ভিড় করছেন।
কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক রাকিবুল ইসলাম মাসুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রত্যেকটি এলাকায় একাধিক শহীদ মিনার থাকে এবং নানা আয়োজন থাকে এই দিনে। তবে কুয়াকাটার প্রাণকেন্দ্রের প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের শহীদ মিনারটি সুনসান দেখে আমরা একটু দূরের পৌরসভা মাঠের মিনারে ফুল দিতে এসেছি। বিদ্যালয় মাঠের মিনারটি প্রস্তুত থাকলে আমরা সেখানেই যেতাম কারণ বিদ্যালয়ের পাশেই আমাদের হোটেল।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে কুয়াকাটা ৬০নং লতাচাপলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. শহিদ দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বিদ্যালয়টি কুয়াকাটার ঐতিহ্য। এখানে আমার বাবা পড়াশোনা করেছে, আমি পড়াশোনা করেছি, আমার সন্তানও এই প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশুনা করেছে। বিগত দিনগুলোতে আমি এই বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি এবং বিগত বছরগুলোতে সবসময়ই এখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস খুব সুন্দর আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়েছে। কিন্তু এ বছর হচ্ছে না শুনে খুবই খারাপ লাগছে। এটি সত্যিই হতাশাজনক।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজের ব্যস্ততার কারণে কোনো ধরনের আয়োজন করতে পারিনি। তবে সকাল ৯টার মধ্যে আমরা আয়োজন করে ফেলব।
২১শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে অথবা প্রভাতবেলায় কেউ যদি শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে ফুল নিয়ে আসে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আসলে ভুল হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি কল ধরেননি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে তারা। কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারি হচ্ছে মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পৃথিবীতে মাতৃভাষার জন্য এত লোক শহীদ হওয়ার নজির আর নেই। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু সেই দিবসটি পালনে যারা অবহেলা করে তারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নয়।
এসএম আলমাস/এসএমডব্লিউ