শুধু ঋণদান করলেই সমবায় সমিতির কার্যক্রম আগায় না

উৎসবমুখর পরিবেশে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সমবায় প্রতিষ্ঠান চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ২৫তম বার্ষিক সাধারণ সভা, ফ্যামিলি ডে এবং জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) চাঁদপুর স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী এই আয়োজন সমিতির বৃহত্তর পরিবারের সদস্যদের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন শেখের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শরিফুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সমবায় ইউনিয়নের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল সালাম, কুমিল্লা কোর্ট বাড়ি সমবায় অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ, সমবায় অধিদপ্তরের সাবেক যুগ্ম নিবন্ধন ও চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমবায় অধিদপ্তরের যুগ্ম নিবন্ধন মো. দুলাল মিয়া, চাঁদপুর জেলা সমবায় অফিসার মজিবুর রহমান খান, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের বহুমুখী কার্যক্রম সারা দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। শুধু ঋণদান করলেই সমবায় সমিতির কার্যক্রম আগায় না। পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি, বেকার সমস্যা দূরীকরণসহ বহুমুখী কার্যক্রম থাকতে হয়। সেই কাজটাই চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড করছে। এখানে এসে আমি সেই কার্যক্রমই দেখলাম। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে এমন কার্যক্রম দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো আমাদেরকেও প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করতে হবে। যার উদাহরণ চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব সমবায় সমিতি। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং চমৎকার ম্যানেজমেন্টের কারণে এই সমিতি আজকে এতদূর এগোতে পেরেছে। চাঁদপুরে যেটা সম্ভব, সেটা, অন্যান্য জেলায়ও সম্ভব। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সমবায় কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এমন কার্যক্রম সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে এমন একটি করে সমবায় সমিতির কার্যক্রম গড়ে তুলতে হবে।
শরিফুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের সবার উদ্দেশ এবং লক্ষ হলো সমবায় আন্দোলনকে গতিশীল করা। আমরা চাই প্রত্যেকটা জেলায় সমবায় ইউনিয়ন থাকবে। মানুষের ক্ষুদ্র পুঁজিকে একত্রিত করা সমবায় ছাড়া আর কোনো মাধ্যম নেই। তাই এটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
এর আগে সকাল ১০টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমেই মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভার কার্যক্রম। এতে সভাপতিত্ব করেন চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু তাহের চৌধুরী।
সভার শুরুতেই সমিতির বার্ষিক কার্যবিবরণী পাঠ, আয়-ব্যয়ের হিসাব, কর্মপরিকল্পনা ও বার্ষিক বাজেট পেশ করেন সমিতির সম্পাদক দেবব্রত সরকার। সমিতির আলোচ্যসূচি, নীতিমালা সংশোধনসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন সমিতির সদস্য মো. শাহজালাল আল সাফি।
পরে উপস্থাপিত আলোচ্যসূচির ওপর উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত সমিতির সদস্যরা তাদের মতামত ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সদস্যদের মতামত এবং অনুমতিক্রমে সমিতির কার্যক্রমকে আরও বেশি বেগবান করার লক্ষ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সদস্য চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ও সমিতির সদস্য ডাক্তার সাইফুল ইসলাম (সোহেল), সমিতির সদস্য ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী বাহা উদ্দিন সুমন, সমিতির সহসভাপতি মো. সেলিম মিয়া, সদস্য মো. মাসুদুর রহমান শেখ, প্রিয়তোষ চন্দ্র শীল, মোহাম্মদ আক্তাতার হোসেন খান, নুরুন্নাহার শিলা।
দুপুর ১২টায় শুরু হয় দিনব্যাপী আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের পারফরম্যান্সের জন্য ‘ব্যবস্থাপক মূল্যায়ন পুরস্কার প্রদান। এতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা স্টাফ পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
দুপুরের মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিকেলে সমিতির সদস্য, তাদের পরিবার ও সব স্টাফ এবং পরিবারের শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ফ্যামিলি ডে’র ক্রীড়া অনুষ্ঠান। যার মধ্যে ছিল- শিশুদের চকলেট দৌড়, আলু কুড়ানো, কুইজ প্রতিযোগিতা, বড়দের হাড়ি ভাঙাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
পুরো আয়োজনজুড়ে সমিতির সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়সহ আনন্দ ভাগ করে নেন। সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্র’ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ইমরান ও পড়শীসহ জাতীয় পর্যায়ের গুণি শিল্পীরা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মজিবুর রহমান ফরহাদ ও সাংবাদিক এম আর ইসলাম বাবু।
আনোয়ারুল হক/এএমকে