সিন্ডিকেট ভাঙতে সড়কে আলু ফেলে চাষিদের বিক্ষোভ

রংপুরে হিমাগার ভাড়া কমানোর দাবিতে সড়কে আলু ফেলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আলুচাষিরা। এ কর্মসূচি থেকে আলুচাষিদের বাঁচাতে ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের সিন্ডিকেট বন্ধ করে আলুর ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে আলুচাষি সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিভিন্ন এলাকার চাষি ও বাম সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে আলুচাষি সংগ্রাম কমিটি রংপুর জেলার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেতমজুর ও কৃষক সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আহসানুল আরেফিন তিতু, আলুচাষি জমশেদ আলী, রেজওয়ান শাহ, তছলিম উদ্দিন, রানা মিয়া, লক্ষ্মীকান্ত রায়, মইনুল ইসলাম, নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের জমি ও আবহাওয়া আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা প্রচুর আলু উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু আলুর বাম্পার ফলন হলেও চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পারে না। আলু যেহেতু পচনশীল সবজি, তাই বেশি দিন ঘরে সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। চাষিদের দ্রুত আলু বিক্রি করতে হয়। এই সময়ে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আলুর বাজারে ধস নামিয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কৃষক হিমাগারে আলু রাখার চেষ্টা করেন।
চাষিরা বলেন, সিন্ডিকেটে জড়িত ব্যবসায়ী, বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা হিমাগার মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে হিমাগারে বেশিরভাগ জায়গা আগেই বুকিং করে রাখে। ফলে কৃষকরা হিমাগারে চাহিদানুযায়ী আলু রাখার জন্য জায়গা পায় না। এভাবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে কোল্ডস্টোর মালিকদের সিন্ডিকেট যুক্ত হয়ে কৃষককে পানির দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য করেন। এবারও দাম কম থাকার কারণে কৃষক জমিতে আলু বেশি দিন রেখে পরিপক্ব বীজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু হিমাগারে বেশিরভাগ জায়গা খাবার আলুর জন্য বুকিং থাকায় বীজ আলুও কৃষকরা রাখতে পারবে না। ফলে আগামী বছর বীজের ভীষণ সংকট তৈরি হবে।
নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের তদারকির অভাবে হিমাগার মালিকরা রাতারাতি আলুর ভাড়া দ্বিগুণ করে দিয়েছে। গত বছর এক বস্তা আলুর হিমাগার ভাড়া ছিল ২৮০ টাকা, আর এবার একই পরিমাণ আলু রাখার জন্য ব্যয় করতে হবে ৫৬০ টাকা। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট দেখার যেন কেউ নেই!
এ সময় সমাবেশে কৃষক ও কৃষি রক্ষার স্বার্থে আলুচাষি সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে হিমাগার মালিক, আলুচাষি এবং জেলা প্রশাসনের একটি যৌথসভার আয়োজন করার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে প্রতিকেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা বাতিল করে দেড় টাকা নির্ধারণ, অগ্রিম বুকিংয়ের নামে বস্তা প্রতি ১০০ টাকা আদায় বন্ধ করা, সরকারি উদ্যোগে প্রতি উপজেলায় বিশেষায়িত বীজ হিমাগার নির্মাণ, হিমাগারে প্রকৃত আলুচাষিদের জন্য ৬০ ভাগ জায়গা বরাদ্দ, ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষিদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সরকারি উদ্যোগে বিদেশে আলু রপ্তানির ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান আলুচাষি সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে সড়কের ওপর আলু ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত আলুচাষিরা সিন্ডিকেট দমনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মনিটরিং ও অভিযান বাড়ানোর দাবি জানান।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ