তিস্তা বাঁচিয়ে রেখে মহাপরিকল্পনা আমরাই করব : সাকি

গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বায়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অববাহিকার ওপর যতগুলো দেশ রয়েছে সবাই সেই নদীর পানি সমনভাবে পাবেন। কিন্তু ভারত সরকার সেই আইন লঙ্ঘন করে তিস্তায় গজলডোবা দিয়ে পানি একতরফা ব্যবহার করছে। এটি হতে দেওয়া হবে না। তিস্তা বাঁচিয়ে রেখে আমরাই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচিতে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগী।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারতের সঙ্গেই আমাদের হিস্যা, পানির হিস্যা। ওইটা আমরা আগে ফয়সালা করে নেব। আমাদের এজন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে নিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, শুধু ইউনুস সরকার নয়, আগামীতে যেই সরকার আসুক প্রত্যেক সরকার যেন আমাদের দেশের স্বার্থ সমানভাবে দেখে। দেশের স্বার্থ কখন বিক্রি করে দেয় —যখন একটা দল, একটা সরকার জনগণের ওপর ভরসা রাখে না। যেমন শেখ হাসিনা জনগণকে ভরসা করেনি। তিন মনে করেছিলেন ভোট করলে হেরে যাবেন। এ কারণে জনগণের ওপর ভরসা রাখেননি। ভোট ছাড়াই ক্ষমতায় ছিলেন। ভোট দিলে তো তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। এ কারণে ভোটের অধিকারও তিনি নষ্ট করেছেন।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে সাকি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বর্তমানে বিদেশি প্রভুর কাছে গেছেন। এভাবে যখন কোনো সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তখন বিদেশির কাছেই আশ্রয় নেন। তাদের কাছেই মাথা নত করে। রাজনৈতিক ব্যবস্থা যদি এমনটাই হয়। ক্ষমতায় গেলেই পুলিশ ও আর্মি আর আমলাসহ সমস্ত প্রশাসন পকেটে রাখা যায়, তাহলে তো তিনি মনে করবেই ক্ষমতা চিরস্থায়ী। এটাই বুঝি আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যখন তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি তোলে তখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতকে চাপে রাখে। ভারত তখন দাবি করে তাদের অঙ্গরাজ্য সরকার মানছে না। তাই সম্ভব যাচ্ছে না। এসব হচ্ছে ভারতে ছলনা। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় তারা সমাধান করবে। চুক্তির দরকার কি? আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ তিস্তার যে হিস্যা পায় তা বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। তা না করে ভারত সরকার তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে টালবাহনা করছে। যা বাংলাদেশের মানুষ মানবে না।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান ও বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। অন্যান্যের মধ্যে একই মঞ্চে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও নদীপাড়ের ভুক্তভোগী নুর বকস।
সমাবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
তিস্তা নদীর দুই পাড়ের ৫টি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে করা হয়েছে মঞ্চ ও থাকার ব্যবস্থা। তিস্তাপাড়ের মানুষ তাদের দাবি আদায় করতে টানা ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ সবাই দলে দলে অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীর। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলে প্রতিটি পয়েন্টে কানায় কানায় ভরে ওঠে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএমকে