ফেনীতে বিএনপির কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের করিমপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন- ইয়াকুবপুর ইউনিয়ন যুবদল নেতা সোহেল, রিয়াজ, শ্রমিক দল নেতা পারভেজ, যুবদল নেতা শাহীন, সুজন, হুদন, যুবদল নেতা আলা উদ্দিন আলো, নুরুল হক সোহেল, মোহাম্মদ সাঈদ, মোশাররফ, রুবেল, নেজাম মেম্বার, শহিদ ও শাহাদাতসহ অন্তত ২০ জন।
স্থানীয় এবং দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, বিকেলে দাগনভূঞা সদর ইউনিয়নের করিমপুর এলাকায় একটি এতিমখানায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ভাই ও দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করতে যান। তার পার্শ্ববর্তী স্থানে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। একপর্যায়ে আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও পরে মারামারি শুরু হয়। এ সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেন নেতাকর্মীরা।
দাগনভূঞা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির ঢাকা পোস্টকে বলেন, করিমপুরে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলুর বাড়ির পাশে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। তার পাশেই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন কম্বল বিতরণ করছিলেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও পরে মারামারি শুরু হয়। সেখানে পুলিশের সামনেও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের লোকজন পারভেজকে বেধড়ক মারধর করে সিএনজি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিতে গেলে তাদেরও হেনস্তা করা হয়। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, একটি অরাজনৈতিক আয়োজনে কম্বল বিতরণের জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতদিন পর তারা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। পরে তাদের অস্ত্র আর বোমাবাজি দেখে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে থানায় চলে আসে। ঘটনাস্থলে কবির আহম্মদ ডিপলু, ফটিক, বাবলু, রিয়াদসহ তাদের লোকজন আমাদের থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও মারধর শুরু করে। তারা আমাদের তিনটি মোটরসাইকেল, ২০-২৫টি মোবাইল ফোন ও আমার স্ত্রীর পাঁচ ভরি স্বর্ণের একটি ব্রেসলেট নিয়ে গেছে। ১৫-২০ জনকে মারধর করে আহত করেছে। এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কমিটির দ্বন্দ্বের বিষয়ে আকবর হোসেন বলেন, যে দলের নেতারা কেন্দ্রের কথা মানে না তারা দলের প্রতি কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার বিএনপির এই কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রদল ও যুবদল নেতা। তারা বিএনপির কেউ নয়।
জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান ফটিক বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আমার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট কথাবার্তা বলেছেন। তিনিই দাগনভূঞার রাজনীতিতে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন। যারা স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যবসা করেছে তাদেরকে তিনি অর্থের বিনিময়ে অবৈধ কমিটিতে জায়গা দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কখনো কোনো প্রকার চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তিনি চাঁদাবাজ বলেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির আহম্মদ ডিপলু ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনুষ্ঠানে আমি দাওয়াত পাইনি বা অবগতও ছিলাম না। আমি দুই পক্ষকে শান্ত রাখার জন্য চেষ্টা করেছি। সেখানে আগে থেকেই প্রশাসনের লোকজন ছিলেন। হামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কের এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
এদিকে এদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে দাগনভূঞা বাজারে দলীয় নেতাকর্মীদের মারধরের প্রতিবাদে ছাত্রদল নেতা ফটিকের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। ওই সময় বাজার এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই স্থানে দুই পক্ষের কর্মসূচির বিষয়ে অবগত হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে থানায় তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে বসেছিলাম। কিন্তু বিকেলে সেখানে তারা দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ ডিসেম্বর ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের একক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে সোনাগাজী এবং দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই এ কমিটি বাতিলের দাবিতে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ ১৮ জানুয়ারি ফেনী প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এ দুই উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা।
ওসির প্রতি ক্ষোভ ঝাড়লেন বিএনপি নেতা
এদিকে নানা কার্যক্রমে দাগনভূঞা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফুর রহমানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকবর হোসেন। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় দাগনভূঞায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ক্ষোভের কথা জানান তিনি।
ওসিকে ইঙ্গিত করে আকবর হোসেন বলেন, কে ছাগল, কে গরু, কে ভদ্রলোক বা কে অভদ্র লোক- এটি যার মাথায় ঢুকে না, তিনি কীভাবে এমন একটি পদে বসেন আমি বুঝি না। একদিন আমি তার কক্ষে গেলে যারা আমার নেতৃত্বে রাজনীতিতে ছিল তাদেরকে সামনে বসিয়ে রাখতে দেখেছি। তিনি ব্যবধানটিই বুঝতে পারলেন না। এই জ্ঞান না থাকলে প্রশাসন চালানো কষ্টকর।
তিনি আরও বলেন, উনি (ওসি) যদি আগে থেকে সেখানে কোনো গণ্ডগোল হওয়ার কথা জানতেন, তাহলে সেই অনুযায়ী পুলিশ রাখা দরকার ছিল। সন্ত্রাসীদের যারা নিরাপদ আশ্রয় দেয়, সেখানে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাগনভূঞা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. লুৎফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব কথা উনার ব্যক্তিগত ধারণা ও চিন্তা চেতনা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দাগনভূঞাবাসীর জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমি সব সময় নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করছি। কিন্তু অনেকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। উদ্ভূত এ ঘটনায়ও দুই পক্ষকে শান্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করেছে। তার অভিযোগ সত্য নয়।
তারেক চৌধুরী/আরএআর