‘আমাগরে কেউ দেখতে আসে নাই’

‘নদী ভাঙন বাড়ির কাছে চলে আসায় ঘরের চালের টিন খুলে অন্য জায়গায় নিয়ে রাখছি। জায়গা ও অর্থের অভাবে কোথাও ঘর উঠাতে পারছি না। আমরা গরিব মানুষ আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাইনি। আমাগরে কেউ দেখতে আসে নাই। আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না।’ এভাবে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চর সোনাপুর গ্রামের মাফুজল হক।
শুধু মাফুজল হক নয় ওই ইউনিয়নে গেল একমাসে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে বিলীন হয়েছে সুখেরবাতি, সাহেবের আলগাসহ প্রায় ৯টি গ্রামের ২৬ পরিবার।
ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদপাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙনের কবলে পড়ে এক ইউনিয়নের ইতিমধ্যেই ঘরবাড়ি ও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে গেছে। তবে পাউবো বলছে, বরাদ্দ না থাকায় ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি তারা।
জানা গেছে, গত এক মাসে উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের ২৬টি বসত বাড়ি, মসজিদ, রাস্তাঘাটসহ কয়েক একর ফসলি জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে এবং হুমকির মুখে পড়েছে সুখেরবাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নদীপাড়ের প্রায় শতাধিক ঘরবাড়িসহ কয়েকশ একর আবাদি জমি।
সুখেরবাতি গ্রামের নুরুল হক, মজিদ মিয়া, সোনা মিয়া বলেন, অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে অনেক জমি, রাস্তাঘাট ভেঙে নদীতে গেছে। দ্রুত নদী ভাঙনরোধের কাজ না করলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এইচ এম সাইদুর রহমান দুলাল বলেন, অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে ব্যাপক হারে নদী ভাঙছে। গত এক মাসে চরশৌলমারী ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের ২৬টি বসতবাড়ি, মসজিদ, রাস্তাঘাটসহ কয়েক একর ফসলি জমি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় সুখেরবাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হওয়ায় জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমতিক্রমে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রাসেল দিও বলেন, ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ না থাকায় এই ভাঙন কবলিত মানুষদের সহায়তা করতে পারিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীর ব্যাপক হারে ভাঙছে। বরাদ্দ না থাকায় ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোতে কিছুই করতে পারছি না। তবে এ নদী শাসনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা দেওয়া আছে বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু করা হবে।
আরকে