৬১ বছরের জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

গোপালগঞ্জ সদরের গোপীনাথপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পল্লী স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নামেই ১০ শয্যা। দুইতলা বিশিষ্ট একটি ভবন দাঁড়িয়ে থাকলেও নেই একটি শয্যাও। ইনডোরে চিকিৎসা দেওয়ার মতো নেই কোনো ধরনের ব্যবস্থা। ৬১ বছর ধরে হাসপাতালটি থেকে মিলছে শুধু জ্বর ও সর্দির চিকিৎসা। দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকায় হাসপাতালটি যেন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে, শুধু নামেমাত্র দাঁড়িয়ে আছে মাটির ওপর।
হাসপাতালের মূলভবনসহ আবাসিক ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে আছে। চারদিকে তৈরি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ। বছরের পর বছর জরাজীর্ণ এই ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে দেওয়া হচ্ছে বহির্বিভাগে নামমাত্র চিকিৎসা।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকা ও রাজনৈতিক অবহেলায় বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালটি। তবে জেলা সিভিল সার্জন বলছেন, মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে, নির্দেশ পেলেই সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে প্রায় সাড়ে ৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত হয় গোপীনাথপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পল্লী স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি। হাসপাতালটি নির্মাণ করেন তৎকালীন পাকিস্তান আমলের বাণিজ্যমন্ত্রী অহেদুজ্জামান মিয়া। তখন থেকে পার্শ্ববর্তী প্রায় ১০ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ এই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৪ সালে অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায় ইনডোরে রোগীর সেবা প্রদান প্রক্রিয়া। এরপর থেকে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে হাসপাতালটি। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন হাসপাতালটিতে। কিন্তু ৪১ বছর ধরে এসব রোগীরা শুধু জ্বর ও সর্দির চিকিৎসা নিতে পারছেন।
হাসপাতালটিতে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফদের থাকার জন্য আবাসিক ভবনসহ মোট ভবন রয়েছে ৬টি। সেগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে, চারিদিকে তৈরি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় মূলভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে যত্রতত্র। বেরিয়ে গেছে ভবনের ছাদের রড। ভবনগুলো এখন মাদকসেবিদের আড্ডাস্থল। এ ছাড়া রয়েছে পানি ও বিদ্যুতের সংকটও।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে একজন চিকিৎসক, নার্স চারজন, অফিস সহায়ক একজন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী একজন রয়েছে। শুধু একবেলা বহির্বিভাগের রোগিদের সেবা দিতে আসেন ডাক্তারসহ কর্তব্যরতরা। সেবা দেওয়ার সময় তারা নিজেরাও থাকেন আতঙ্কের মধ্যে। দ্রুতই ১০ শয্যার হাসপাতালটি সংস্কার করে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হোক—এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
হাসপাতালে জ্বরের ওষুধ নিতে আসা আসমা বেগম নামে এক নারী বলেন, এই হাসপাতালে আশপাশের ১০টা ইউনিয়নের মানুষ এক সময় চিকিৎসা নিতে আসতো। আশির দশকে অদৃশ্য কারণে ইনডোর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে মানুষ এখানে আর তেমন আসতো না। তারপরও প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। কতৃপক্ষের কাছে আমাদের একটাই চাওয়া দ্রুত হাসপাতালটির সংস্কার করে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক।
চিকিৎসা নিতে আসা রফিকুজ্জামান বলেন, হাসপাতালের ভবনগুলো ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এখানে জ্বরের চিকিৎসা নিতে আসলেও আমরা ভয়ে থাকি। এ ছাড়া দুপুরের পরে আর কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। আমাদের এলাকাটি ঘনবসতি হওয়ায় চিকিৎসার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এলাকায় ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল থাকার পরও আমরা বঞ্চিত। আমরা শুধু জ্বর ও সর্দির ওষুধ পেয়ে থাকি। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি, দ্রুতই ভবনগুলো সংস্কার করে আমাদের কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হোক।
গোপিনাথপুর ১০ শয্যা বিশিষ্ট পল্লী হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ বিশ্বাস বলেন, হাসপাতাটিতে ১০টি বেড থাকার কথা। লোকবল, ডাক্তার, পরিক্ষা-নিরীক্ষা করার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি থাকার কথা, কিন্তু কিছুই নেই। শুধু আউটডোর কার্যক্রমের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা মোট ২৫ প্রকার রোগের ওষুধ দিয়ে থাকি। কিন্তু মাঝে মাঝে শেষ হয়ে গেলে তখন সংকটে পড়তে হয়। কতৃপক্ষের কাছে আবেদন করে ওষুধ আনতে হয়। তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই অনেক সময় রোগীরা ওষুধ না পেয়ে অভিযোগ করেন।
গোপালগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মো. ফারুক বলেন, কয়েকদিন আগে আমি হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। হাসপাতালটির বেহাল অবস্থা দেখে এসেছি। মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। সেখান থেকে নির্দেশ পেলেই সংস্কার শুরু করবো।
এএমকে