ঢাকা মেডিকেলে সুযোগ পেয়েও ভর্তি হতে পারছেন না সামাউল

দারিদ্র্য পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মো. সামাউল ইসলাম। তার জন্ম এক সংগ্রামী পরিবারে, যেখানে প্রতিদিন জীবনের জন্য লড়াই করতে হয়। তার বাবা একজন প্রতিবন্ধী, যিনি গ্রামে গ্রামে ভ্যানে শাকসবজি বিক্রি এবং ভাঙারির ব্যবসা করে সামাউলের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ জোগান দেন। এরপরও দারিদ্র্যের শিকল সামাউলকে আটকে রাখতে পারেনি।
সামাউল তার কঠোর পরিশ্রম এবং মা-বাবার ত্যাগের ফলস্বরূপ সামাউল ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তবে দুঃখের বিষয়, অর্থের অভাবে তিনি এখন ভর্তি হতে পারছেন না। তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। একটি সম্ভাবনাময় জীবনের অঙ্কুর যেন থেমে যাচ্ছে শুধুমাত্র অর্থের অভাবে।
সামাউলের বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বড়বামনদহ গ্রামে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সামাউল বড়। তার ছোট ভাই সিয়াম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা তাজির উদ্দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাঙারির ব্যবসা করেন। অভাবের সংসারে সামাউলকে লেখাপড়া করাতে স্বজনদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়েছেন অনেক। এখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে পরিবারটির।
ঢাকা পোস্টকে তাজির উদ্দিন বলেন, দুই ছেলেমেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে আমার সংসার। আগে সবজি বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চলতো। এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভাঙারির মালামালের ব্যবসা করি। লেখাপড়া করাতে অনেক কষ্ট করেছি। এর ফলও পেয়েছি। সামাউল এসএসসিতে ভালো ফল অর্জন করে। তবে সেই সময় ভর্তি করা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। তখন মানুষের সহায়তায় ভর্তি করা হয়। এখন মেডিকেলে ভর্তি করে পড়ানোর সামর্থ্য আমার নেই। আমার ছেলের ভর্তির জন্য স্বচ্ছল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই।
মা সায়মা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামাউল প্রথম থেকে অনেক মেধাবী। ওর লেখাপড়ার প্রতি অনেক আগ্রহ। এটা দেখে আমরাও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়। কিন্তু আমাদের অর্থ না থাকায় বিভিন্ন সময়ে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছে। গ্রামের কিছু ভালো মানুষের কাছ থেকেই আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কারণেই সামাউল আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে। সব ক্লাসে সে প্রথম হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষাতেও সে কোটচাঁদপুরের মধ্যে সেরা ছাত্র নির্বাচিত হয়।
আরও পড়ুন
কোটচাঁদপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. সোহেল আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামাউল খুবই দারিদ্র্য পরিবারের ছেলে। সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তার লেখাপড়ার খরচ দিয়ে আসছি। ছেলেটা অনেক মেধাবী যার কারণে এলাকার সবাই কমবেশি সহযোগিতা করে। এবার সে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেকে) ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এতে গ্রামের সবাই অনেক আনন্দিত। আমরা চাই সে ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করবে।
সামাউল ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ২৪৬তম হয়ে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। তখন থেকেই কষ্ট করে আসছি। এসএসসি এবং এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার মেডিকেল ভর্তির জন্য ২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এই টাকা আমার বা আমার পরিবারের জোগাড় করা খুবই কঠিন। নিজেদের তেমন কিছু নেই যে সেগুলো বিক্রি করে টাকা জোগাড় করবো। এইচএসসি পরীক্ষার পর প্রথম আলো থেকে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি পেতাম। এখন আর পাই না। এ ছাড়া আমার প্রতিবেশী মামা লেখাপড়ার জন্য কিছু খরচ দিতেন। পরিবারের পাশাপাশি এলাকার কমবেশি সবাই আমাকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছে। আমি মানবিক ডাক্তার হতে চাই।
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উছেন মে ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামাউল মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর আমরা তার খোঁজখবর নিয়েছি। সে খুবই দারিদ্র্য পরিবারের একজন মেধাবী ছাত্র। উপজেলা প্রশাসন থেকে মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার জন্য সহযোগিতা করা হবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/এমজেইউ