দাম না পেয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন সবজি, লোকসানে কৃষক
নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল সুবর্ণচরকে জেলার শস্যভাণ্ডার বলা হলেও ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতির পর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় লোকসানে রয়েছেন কৃষক। দাম না পেয়ে কেউ গরুকে খাওয়াচ্ছেন সবজি আবার কারো জমিতেই নষ্ট হচ্ছে সবজি। শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে।
বিজ্ঞাপন
ক্রেতারা একপ্রকার ‘পানির দরে’ কিনে সবজির স্বাদ নিতে পারছেন ঠিকই, কিন্তু এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন উৎপাদনকারী কৃষকরা। ফসলের কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে তাদের এখন মাথায় হাত।
সরেজমিন দেখা গেছে, সুবর্ণচর উপজেলার চরক্লার্ক ও মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের কৃষকরা লাউ, শিম, করলা, টমেটো, বেগুন, শসা ও মরিচসহ শীতকালীন সবজি আবাদ করছেন। স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ার আশা নিয়ে রোপণ করা শীতের সবজি এখন লোকসানে ফেলেছেন কৃষকদের। ফলে বাধ্য হয়ে এসব সবজি গরুকে খাওয়াচ্ছেন অথবা জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
কৃষক ইসমাইল হোসেন দুদু সওদাগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা পারিবারিকভাবেই কৃষক। প্রতিবছরই চাষাবাদ করি। এবারের মত ধরা আগে কখনো খায়নি। এক কেজি শিম বাজারে বিক্রি করতে গেলে ২০ টাকা দাম পাই না কিন্তু কিনতে গেলে ৩০ টাকার নিচে কেনা যায় না। লাউয়ের দাম এত কম যে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। আবার লাউ খেলে গরুর ঠান্ডা লেগে যায়। তাই জমিতেই সবজি নষ্ট হচ্ছে।
মিলন হোসেন নামের আরেক কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর শীতকালীন সবজির চাহিদা থাকে, দামও ভালো পেতাম। লাভের আশায় চলতি মৌসুমে অনেকেই সবজি চাষাবাদ করেছে। কিন্তু এ বছর নানান জাতের সবজিতে বাজার ভরে যাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও মুনাফার অঙ্ক শূন্যের ঘরে। ভয়াবহ বন্যার কারণে আমাদের গতবারের ফলন খারাপ হয়েছে। এবার বাজারে দাম কম পাওয়ায় আমাদের সবজি জমিতেই নষ্ট হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মো. সিরাজ উদ্দিন নামের এক কৃষক ও পাইকারি বিক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সবাই কৃষক। আমাদের কৃষি পণ্য সারাদেশে যায়। কিন্তু প্রতিদিন আমাদের লাখ লাখ টাকা লোকসান দিচ্ছি। আমি ক্ষেত থেকে ২২ টাকায় এক কেজি শিম ক্রয় করে আড়তে বিক্রি করতে গেলে ১৮ টাকার বেশি দাম পাই না। আমরা চাই কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পাক। সরকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কৃষক না বাঁচলে দেশ বাঁচবে না। সার ও কীটনাশকের দামও হু হু করে বাড়তেসে। আমাদের মরে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না।
মো. আজাদ উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে দাম নেই, পাইকারি ব্যবসায়ীরাও আসছে না। তাই জমিতে নষ্ট হচ্ছে সবজি। এসব সবজি বিক্রি করে আমদের পরিবহন ও শ্রমিক খরচও উঠছে না। বিশেষ করে ঋণ নিয়ে সবজি আবাদকারী কৃষকরা বেশি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
নোয়াখালী জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মুমু পোদ্দার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নোয়াখালীতে এবছর শীতকালে সব উপজেলায় রবি শস্যের ফলন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে সুবর্ণচর উপজেলায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়া মার্কেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেব যেন তারা ন্যায্যমূল্য পায় এবং ভোক্তাদেরও ক্ষতি না হয়।
হাসিব আল আমিন/আরকে