হাতিয়ার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে ৪ গ্রাম
ঘূর্ণিঝড় 'ইয়াসের' প্রভাবে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিম্নাঞ্চলের নলচিরা ঘাট, নিঝুম দ্বীপ ও বয়ারচরসহ কয়েকটি গ্রাম অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। তবে এখনো বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চারটি গ্রাম সম্পূর্ণভাবে পানিতে তলিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিঝুমদ্বীপ ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কেপায়েত উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হাতিয়ার চারপাশে নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট পানি বেড়েছে। নিঝুম দ্বীপে বেড়িবাঁধ না থাকায় অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে গেছে চারটি গ্রাম। এর মধ্যে মোল্লা গ্রাম, মদিনা গ্রাম, বান্দাখালী গ্রাম ও মুন্সি গ্রাম ৩ থেকে ৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
হঠাৎ প্লাবিত হওয়া এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, গোখাদ্য। অনেক এলাকায় মানুষের কাঁচা ঘরবাড়িও ভেসে যেতে দেখা যায়।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, সাইক্লোন শেল্টারে দুর্গত মানুষকে নিয়ে আসা ও খাদ্যসহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হবে। চর আতাউর, ঢাল চর, চর ঘাশিয়ায় বসবাসরত লোকদের তমরুদ্দি ইউনিয়ন ও সুখচর ইউনিয়নে নিয়ে আসা হবে। কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবক ওয়ার্ড ভিত্তিক কাজ করবেন। গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। সিপিপির পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা সিপিপি কর্মকর্তা বদিউজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব ও পূর্ণিমার প্রভাব এক হয়ে জোয়ারের পানি বেড়েছে। রাতের জোয়ারে পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। আমাদের ১৮১টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, দুর্গত মানুষকে দ্রুত শেল্টারে নিয়ে আসা হবে।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রস্তুত করা হয়েছে ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র। যাতে ৮০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষ যাতে সহজে আসতে পারে, তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস থেকে মেঘনা উপকূলীয় বাসিন্দাদের রক্ষায় নোয়াখালীতে ৩৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যোগের আগে ও পরে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ১০৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসন, জেলা-থানা পুলিশ বাহিনী, স্বাস্থ্য বিভাগের হটলাইন নম্বরগুলো ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। নম্বরগুলো জনসাধারণের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মুহূর্তে মেঘনা উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের জন্য ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ৯ লাখ ও গোখাদ্যের জন্য ৯ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ লাখ টাকা ও ৩০০ মেট্রিক টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণকে রক্ষা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইয়াস মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব আমরা।
উল্লেখ্য,নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া উপজেলা মেঘনা নদীবেষ্টিত। যেকোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই দ্বীপটির ওপর আঘাত হানে।
হাসিব আল আমিন/এনএ