শয্যা ও রোগীর চাপ বাড়লেও বাড়েনি জনবল
ছয় উপজেলা নিয়ে নানাখাতে সমৃদ্ধ জেলা ফেনী। এখানকার প্রায় ১৬ লাখ মানুষের চিকিৎসায় অন্যতম ভরসাস্থল হয়ে উঠছে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। তবে অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতির সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে রোগীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জেলার সবচেয়ে বড় এ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে। অতিরিক্ত চাপ পড়ছে বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, কাগজে-কলমে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখনো ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের জেনারেটর, টেলিফোন সংযোগ, লিফট সেবা ও সিসিটিভি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা।
হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্য মতে, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৩০৬টি সৃষ্ট পদের বিপরীতে জনবল রয়েছে ২০৬ পদে। হাসপাতালে ৯ জন সিনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৫ জন। ১২ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৬ জন। এছাড়াও হাসপাতালে বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে কোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, শিশু রোগ, রেডিওলজি, প্যাথলজি, সার্জারি, দন্ত, চক্ষু, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। বিশেষায়িত সেবা, ডায়ালাইসিস, আইসিও, সিসিও, স্ক্যানু ও থেরাপি বিভাগের জন্যও নির্দিষ্ট জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে ১৫৩টি সেবিকার পদের বিপরীতে শূন্য পদ রয়েছে ৩২টি, ৪২টি অফিস সহায়ক (৩য় শ্রেণি) পদের মধ্যে শূন্য পদ ১৬টি ও ৪র্থ শ্রেণির পদে ৭৩ জন কর্মরত থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ১৬ জন।
এদিকে রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় দুর্ভোগে পড়েন হাসাপাতালটিতে আসা সেবাগ্রহীতারা। অন্যদিকে শূন্য পদে চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগের জন্য বিগত সরকারের সময় থেকে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানান হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফেনী জেনারেল হাসপাতালের নতুন (৬ তলা) ভবনে রোগীদের ওঠানামা করতে হয় সিড়িতে পায়ে হেঁটে। এ ভবনে দুইটি লিফট থাকার কথা থাকলেও বসানো হয়েছে একটি। তাও সেটি বিগত ৩-৪ বছর বিকল হয়ে পড়ে আছে। এ ভবনের নিচতলায় রয়েছে প্যাথলজি, টিকিট কাউন্টার, এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও চিকিৎসকদের কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় আইসিইউ ও অপারেশন থিয়েটার, ৩য় ও ৪র্থ তলায় সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স বিভাগ। ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় নতুন ওয়ার্ড স্থাপন করা হলেও লিফট জটিলতায় সেগুলো চালু করা যাচ্ছে না। ফলে রোগীদের চলাচলে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি ১৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। এখানে ৫৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলে রয়েছে ৪৩ জন। বর্তমানে ৩২ জন সেবিকার সংকট রয়েছে। অফিস সহায়ক পদেও সংকট রয়েছে। চিকিৎসক ঘাটতি নিরসনে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এটাচমেন্ট (প্রেষণ) চিকিৎসক আনতে হয়। কিন্তু তাদেরও বেশি দিন রাখা যায় না।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ে। এখানে গত ১০ বছর ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় অর্ধশতাধিক কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও গত ৮ মাস তাদের বেতন বন্ধ হয়ে আছে। এজন্য তারাও বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে কাজ বন্ধ করে রাখে।
ডা. আবুল খায়ের মিয়াজি বলেন, অবকাঠামো, জনবল ও চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি পেলে সেবার মান আরও বেগবান করা যাবে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। গুরুত্ব বিবেচনা করে ২৫০ শয্যা অনুপাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের একমাত্র লিফট নষ্ট হয়ে আছে। এটি মেরামত ও নতুন লিফট স্থাপনের জন্য বারবার লিখেও কোনো সমাধান মেলেনি।
হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফেনী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জিতু বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ না পেলে আমরা কাজ করতে পারি না। রুটিন কাজের অংশ হিসেবে যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। পুরোনো লিফট সংস্কার ও নতুন লিফট স্থাপনের জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জরুরি বিভাগ প্রশস্তকরণের জন্যও ইতোমধ্যে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ করা হবে।
তারেক চৌধুরী/আরকে