ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ভূমি অফিসের ৫ কর্মকর্তার নামে মামলা

খুলনার পাইকগাছায় ঘুষ গ্রহণ ও কাজ না করে দেওয়ার অভিযোগে উপজেলা ভূমি অফিসের ৫ কর্মকর্তার নামে মামলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১২ জানুয়ারি) উপজেলার রামচন্দ্রনগর প্রতাপকাটি গ্রামের শেখ সওকাত আলীর ছেলে শেখ নজরুল ইসলাম আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন।
পাইকগাছা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ারুল ইসলাম মামলাটি গ্রহণ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী এফ এম এ রাজ্জাক।
মামলার আসামিরা হলেন- পাইকগাছা উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার মো. ইফতেখারুল ইসলাম শামীম, সার্টিফিকেট সহকারী অমত্য বিশ্বাস, সার্ভেয়ার মো. কাওছার আলী, নাজির কাম-ক্যাশিয়ার জিহাদ উল্লাহ ও কপিলমুনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন।
বিজ্ঞাপন
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছা উপজেলার হওলী মৌজার এস এ খতিয়ান ১১৭ দাগ নম্বর ২৯০ এর ১.৩৮ একর এবং প্রতাপকাটি মৌজার এসএ খতিয়ানে ৩.৯৫ একরের মধ্যে ১.৩০ একর জমি ভিপি তালিকাভুক্ত হয়। বাদীর বাবা শেখ সওকাত আলী ভিপি লিজ কেস নম্বর ৫৫৪/৭৪-৭৫ এর মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব দিয়ে ইজারা দিয়ে সরকারের পক্ষে ভোগ দখল করতে থাকেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে একই এলাকার আয়ুব আলীকে ধান ও মাছ চাষের জন্য মৌখিকভাবে পার্টনার হিসেবে নেন। সওকাত আলীর মৃত্যুর পরে আয়ুব আলী ও তার ছেলে বাবুল আক্তার জাল দলিলের মাধ্যমে ওই সরকারি ভিপি জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করেন।
এদিকে উক্ত জমি ভিপি তালিকার গেজেট ‘ক’তে প্রকাশিত হয়। সওকাত আলীর মৃত্যুর পর এ মামলার আসামিরা অফিস থেকে ওই জমির বকেয়া হালনাগাদ ডিসিআর নবায়নের জন্য তার ছেলেদের নোটিশ দেয়। ২০২৩ সালের ১৭ মে নোটিশ পেয়ে শেখ নজরুল ইসলাম ও তার ভাইয়েরা ইজারা নবায়নের জন্য আবেদন করেন। তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নামে এ মামলার আসামি ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার কাওছার আলী তাদের কাছ থেকে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ৩ দফায় ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। কাওছার আলী তাদের পক্ষে ইজারা নবায়নের জন্য মতামত দেন।
আরও পড়ুন
তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, আয়ুব ও তার ছেলে বাবুল আক্তার ভুয়া দলিল তৈরি করে সরকার জমি তাদের নামে রেকর্ড করে আত্মসাৎ করেছেন। ২০২৪ সালের ২০ মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা সহকারী ভূমি অফিসার মো. আল আমিন উভয়পক্ষের শুনানি শেষে শেখ নজরুল ও তার ভাইদের পক্ষে ইজারা নবায়নের আদেশ দিয়ে প্রতিপক্ষ বাবুল আক্তার গংদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। আদেশ অনুযায়ী সার্ভেয়ার কাওছার আলী ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন জমি দখল নেন এবং বাদী হাওলী মৌজার ১,০০ একর জমির বকেয়াসহ হালনাগাদ ইজারা নবায়ন করেন।
পরবর্তীতে পাইকগাছা উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার হিসেবে মো. ইফতেখারুল ইসলাম শামীম যোগদান করেন। এরপর তিনি প্রতাপকাটি মৌজার জমি পুনরায় দখল ভিত্তিক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য কপিলমুনি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে দখল ভিত্তিক প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। ওই প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বাদীর ভাই মো. রুস্তম আলীর কাছ থেকে তিনি বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন।
পরবর্তীতে ভূমি অফিসের সার্টিফিকেট সহকারী অমত্য বিশ্বাস বিভিন্ন সময়ে মো. ইফতেখারুল ইসলাম শামীমকে দেওয়ার কথা বলে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ইজারা নবায়নের নামে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করে। একইভাবে অমত্য বিশ্বাস ও জিহাদ উল্লাহ পরস্পর যোগাযোগ করে সহকারী ভূমি কমিশনারকে দেওয়ার কথা বলে আরও এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন।
এ টাকা নেওয়ার পর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর উপজেলা ভূমি কমিশনার মো. ইফতেখারুল ইসলাম শামিম বাদী পক্ষের অনুকূলে ইজারা নবায়ন করেন।
গত বছরের ১১ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে ডাকযোগে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন বাদী। এ বছরের ৮ জানুয়ারি সকাল ১১টার দিকে পাইকগাছা উপজেলা ভূমি অফিসে আসামি অমত্য সেন ও মো. জিহাদ আলীর কাছে জমির ইজারার টাকা ফেরত চাইলে বাদীকে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ বিভিন্ন মামলার জড়ানোর হুমকি দেয়।
বাদী পক্ষের আইনজীবী এফ এম এ রাজ্জাক বলেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন। মামলাটি দুর্নীতি পরায়ণ হওয়ায় এবং এর ধারাগুলো বিচারিক কার্যক্রম এখানে সম্ভব নয় বলে আদালত উল্লেখ করেন। আদালত বাদীকে বিশেষ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এমএন