‘শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সকল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন। এখন সেখান থেকে তিনি ষড়যন্ত্র করছেন। একজন আন্তর্জাতিক খুনি ও সব খুনের মাস্টারমাইন্ডকে ভারত আশ্রয় দিয়ে জেনেভা কনভেনশন এবং সকল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে। তাহলে আমরা এটা বলতে বাধ্য, এত বছরের জুলুম, নির্যাতন, লুটপাট ও খুনের পেছনে তাদেরও (ভারত) হাত ছিল। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য। তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর জেলা শাখার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজ মাঠে এ কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি আরও বলেন, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু করেছিলাম তা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার ঘটনায় ম্লান করে দিয়েছিল। সেই ২৮ অক্টোবর থেকে ভারতীয় আধিপত্যবাদীদের এদেশীয় দালাল, সেবাদাস চক্ররা এ দেশের মসনদে বারবার বসার চেষ্টা করেছে। ২০০৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা একটি কালো অধ্যায় পার করেছি। এ সময় আমাদের কোনো গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না, রাজনৈতিক অধিকার ছিল না, ভোটাধিকার ছিল না, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতিসত্তা পায়ের নিচে পিষে ফেলা হয়েছিল।
গোলাম পরওয়ার বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে অর্থনীতিতে লুটপাট চলেছে। জুডিশিয়ারি বিচার অঙ্গনে কোনো ন্যায়বিচার ছিল না, শাসনক্ষমতা এই শেখ পরিবার এবং আওয়ামী পরিবার সিন্ডিকেট করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। কত মানুষ শহীদ হয়েছে, কত মানুষ আহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ কারাবরণ করেছে। কত শিশু, কত বৃদ্ধ, কত মা আল্লাহর কাছে চোখের পানি ফেলে কান্না করেছে। অত্যাচারী শাসকের হাত থেকে এ জনপদকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করেছে। আমরা জানি না কোন শহীদ বা কার হাতকে আল্লাহ কবুল করেছেন। গত ৫ আগস্ট আসমান থেকে আল্লাহর রহমতের ধারা বর্ষিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই স্বৈরাচার কত মানুষকে হত্যা করল, কত নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে দিল। বিগত ২০১৪, ১৮, ২৪ সালে তিনটি নির্বাচনে আমরা ভোট দিতে পারিনি। রাজনৈতিক দলের আন্দোলনকে গুম করে, নিষিদ্ধ করে আর নির্যাতন করে বিরোধী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা যে ট্রাইব্যুনাল করেছিল আলেমদের ফাঁসি দেওয়ার জন্য, আল্লাহর কী বিচার এখন সেই ট্রাইব্যুনালেই তার বিচারের আয়োজন চলছে। দুই শতাধিক মামলা হয়েছে ট্রাইব্যুনালে। রেড অ্যালার্ট জারি হয়েছে, ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।
সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা রাজপথে ছিলাম, নেতৃত্ব দিয়েছি, রক্ত দিয়েছি, শহীদ হয়েছি, তাদের কাছে আমার মিনতি জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা, এই ঐক্যের আলোকে আসুন এটাকে জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন সেই সংস্কারটুকু করে আমরা নির্বাচনে যাই।
গাজীপুর জেলা শাখার আমির ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. মো. সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মো. আবুল হাশেম খান, গাজীপুর মহানগর শাখার আমির অধ্যাপক মুহা. জামাল উদ্দিন, সিনিয়র নায়েবে আমির মোহাম্মদ আব্দুল হাকীমসহ জেলা, উপজেলা ও মহানগর পর্যায়ের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত পোশাককর্মী মুকুল কুমার দত্ত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
শিহাব খান/এমজেইউ