বাঁধ ভেঙে গেলে বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না
‘আমরা উপকূলবাসী ঝড়কে ভয় পাই না, ভয় পাই লাজুক বেড়িবাঁধকে। ঝড়ের থেকে বেশি ক্ষতি হবে যদি বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়ে যায়। তখন জানমালের বেশি ক্ষতি হবে, অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে মানুষ।’
কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের বাসিন্দা শাহিন বিল্লাহ্।
তিনি বলেন, উপকূলের মানুষরা নিজে বাঁচতে এখন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত করতে ব্যস্ত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খবর নেই, থাকেও না। বিপদ ঘটে যাওয়ার পর কিছু বস্তা নিয়ে তারা হাজির হবেন। অতীতে এমনটাই করেছেন তারা। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে সেই দাবি এখনো পূরণ হয়নি। অনিশ্চিত হয়ে আছে আমাদের জীবনযাত্রা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতি বছরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলে আঘাত হানছে। এরপর উপর মহল উপকূল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যায়। তবে আমরা তার বাস্তবায়ন দেখি না।
উপকূলীয় পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের মৌল্লাপাড়া-চৌদ্দরশি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ। এর মধ্যে তিনটি পয়েন্টে ভাঙন রয়েছে। একটু জোয়ারের পানির আঘাতেই বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করবে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের খবরে সোমবার (২৪ মে) সকাল থেকেই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উপকূল রক্ষা বাঁধ সংস্কারে নেমেছেন এলাকাবাসী।
স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধে কাজ করা শ্রমিক জিয়াউর রহমান বলেন, নিজেরা বাঁচতে একত্রিত হয়ে বাঁধ সংস্কার করছি। বাঁধ ভেঙে গেলে বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। কী করব? আমাদের দুর্দশা দেখার মানুষ নেই।
উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, লেবুগুনিয়া, নাপিতখালী, চকবারা, কালিবাড়ি ও গাবুরা পয়েন্টে ৩-৪ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানলে এগুলো বিলীন হয়ে যাবে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মন্ডল বলেন, পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকার তিনটি পয়েন্ট, পূর্ব দুর্গাবাটির দুটি পয়েন্ট, দাতিনাখালী এলাকার দুটি এবং কলবাড়ি ও চুনা এলাকায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এসব এলাকায় জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হবে। ইউনিয়নের মধ্যে ১০-১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় ২৯টি পয়েন্টে দেড় কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানলে বাঁধের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না। তাছাড়া যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে সেসব স্থান মেরামত করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, আমার এলাকার মধ্যে ১৬টি পয়েন্টে ৫.২৯২ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের আঘাত তীব্র হলে বাঁধ ভাঙার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আঘাত কম হলে ভাঙবে না।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কত ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হবে সেটি এখনই বলা যাবে না।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর