সৎ ভাইকে ফাঁসাতে বাকপ্রতিবন্ধী মেয়েকে হত্যা, বাবার আত্মসমর্পণ
শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নে সাহাব্দীচরের দশানীপাড়া গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী সাদিয়া আক্তার (১৩) হত্যা মামলার মূল আসামি জন্মদাতা বাবা জামাদার আলী (৫০) আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ৯ (জানুয়ারি) বিকেলে স্বেচ্ছায় সদর জি.আর আমলি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জমাদার আলী। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মাহমুদ তাকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। জামাদার সাহাব্দীরচর দশানীপাড়া গ্রামের মৃত কুমর শেখের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশ পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মো. জামাদার আলী পূর্বশত্রুতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তার সৎ ভাই আব্দুল আজিজ ও আব্দুল হালিমকে ফাঁসাতে গত ৬ জানুয়ারি সোমবার বাকপ্রতিবন্ধী মেয়ে সাদিয়া আক্তারকে বেড়ানোর কথা বলে বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি ক্ষেতে নিয়ে ধারাল দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।
ওই ঘটনার পরদিন সাদিয়ার মা মারুফা বেগম বাদী হয়ে জামাদার আলীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. তারেক বিন হাসান বলেন, “এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জামাদার আলী দুষ্ট প্রকৃতির ও মামলাবাজ লোক। হত্যাকাণ্ডের কিছুক্ষণ আগে জামাদার তার মেয়েকে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এমন সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গেছে। সাদিয়া হত্যার ঘটনার পর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছিল। এক পর্যায়ে সে পুলিশের তাড়া খেয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিগগিরই রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে। জিজ্ঞাসাবাদে খুনের প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে আশা করছি।”
কামারেরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, “বাবার কাছেও যদি কন্যা নিরাপদ না থাকে তাহলে আর কোথায় নিরাপদ থাকবে। জামাদার জুয়া খেলে সব শেষ করে এখন ভাইদের সম্পদ নিয়ে বিরোধ করে আসছে। জমিজমা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ। নিজের ভাইদের ফাঁসানোর জন্যই এমন কাজ করেছে জমাদার।”
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি দেখছি সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে নিয়ে এই বন্ধে (মাঠে) আসে জমাদার মিয়া। এসময় মেয়েডার হাতে দাও দেখছি। এরপরই মেয়েডার কুপাইয়া মাইরা ফালায়।’
নাম না প্রকাশ করার শর্তে কয়েকজন জানান, মেয়েকে কোপানোর পর জামাদার মাঠের পাশে একটি বাড়িতে গিয়ে পানি খেয়েছেন। এরপর চরের মাঝখান হেঁটে হেঁটে পালিয়ে যেতে দেখেছেন কয়েকজন কৃষিশ্রমিক। তবে তাকে ধরার সাহস করেনি কেউই।
মোঃনাইমুর রহমান তালুকদার/এসএমডব্লিউ