নওগাঁয় ১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ফুলকপি, তবুও ক্রেতা নেই
উত্তরের শস্যভান্ডার খ্যাত জেলা নওগাঁ। মৌসুমের প্রায় সকল শাক-সবজি চাষ হয় এই জেলায়। চলতি শীত মৌসুমে জেলার ফুলকপির বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। মাত্র ১-৪ টাকা পিস দরে ফুলকপি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। তবুও অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতা নেই। ফলে চরম দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন জেলার ফুলকপি চাষিরা।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে নওগাঁ সদর উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন ডাক্তারের মোড়ের অস্থায়ী পাইকারি ফুলকপির হাটে গিয়ে দেখা যায়, ভোর থেকেই কৃষকরা তাদের জমিতে চাষ করা ফুলকপি বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসছেন। কিন্তু ফুলকপি বিক্রি করতে এসেই পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। আকার অনুযায়ী প্রতিটি ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১-৪ টাকা দরে। এরপরও কেউ কেউ অপেক্ষা করেও ক্রেতার দেখা পাচ্ছেন না।
কৃষকরা বলছেন, গত বছর ফুলকপির ভালো দাম পেয়েছেন তারা। সে বিষয়টি ভাবনায় রেখে এ বছরও আবাদ করেছেন তারা। তবে ফুলকপির দাম যা দাঁড়িয়েছে তাতে লাভ তো দূরে থাক, উৎপাদন খরচই উঠে আসছে না। সবজির দামে ভোক্তারা স্বস্তি পেলেও খরচের টাকা তুলতে না পেরে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতীয় এ সবজির উৎপাদন কম থাকায় দাম ছিল বেশ চড়া। বর্তমানে উৎপাদনের পরিমাণ বেশি হওয়ায় বাজারে এমন ধস নেমেছে বলে মনে করছেন তারা।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে জেলায় এ বছর ৬২০ হেক্টর জমিতে ফুলকপির চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ১৭ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন ফুলকপি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
ডাক্তারের মোড়ের পাইকারি ফুলকপির হাটে কপি বিক্রি করতে আসা কৃষক নওগাঁ সদর উপজেলার ডাক্তারের মোড়ের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ বলেন, ১৫ কাঠা জমিতে কপি লাগাইছি। এখন পর্যন্ত লাগানো থেকে শুরু করে, কীটনাশক, সার, বীজ এবং শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। কপির একটা চারা ১ টাকা দামে কিনে লাগাইছি। প্রথম দিকে ২০-৪০ টাকা দরে বিক্রি করছি। কিন্তু এখন দাম ১-৪ টাকা, তাও কিনতে চায় না। এ দামে কপি বিক্রি করে চারার দামই উঠছে না।
নওগাঁর শুকারি চাঁদপুর এলাকার কৃষক ওমর ফারুক বলেন, ২ বিঘা জমিতে কপি লাগাইছি। এখন পর্যন্ত খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা হয়েছে। আজকে বাজারে ১৮০ পিস ফুলকপি আনছিলাম। ৪ টাকা পিস বিক্রি করেছি। বাজার এ বছর একদমই খারাপ। কপি বিক্রি করে উৎপাদন খরচ তো দূরে থাক গাড়ি ভাড়ার টাকাই উঠতেছে না। এ রকম বাজার থাকলে কৃষক মরে শেষ হয়ে যাবে। ফুলকপি কেউ কিনতে চায় না।
নওগাঁ সদর উপজেলার বাছারি গ্রাম সোনারপাড়ার কৃষক মেহের আলী বলেন, দুই বিঘা জমিতে কপি লাগাইছি। নিজেই পরিশ্রম করেছি, যার জন্য শ্রমিক খরচ তেমন হয়নি। এরপরও ২ বিঘা জমিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার টাকার কপি বিক্রি হয়েছে। এখন গাছ বড় হয়ে গেছে কপিও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কপি ১-৩ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে না। এ দামে কপি বিক্রি করে গাড়ি ভাড়ার টাকাটাও উঠছে না। চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি।
ফুলকপির দামের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সোহাগ সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম একদম কমে গেছে। আগাম জাত এবং মধ্যবর্তী জাতের ফুলকপি একসঙ্গে বাজারে আসায় সরবরাহ অনেক বেড়ে গেছে। ভোক্তারা সেভাবে আর ফুলকপি কিনছে না। বিপণন অধিদপ্তর কয়েকদিন স্বপ্নের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলায় কপি বিক্রি করার চেষ্টা করেছে। একবার ৫ টাকা দরে কিনেছিল, এখন আর তারাও কিনতে চাচ্ছে না। বিপণন অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
আরএআর