পুলিশের ছবি তোলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর, দুই ওসি প্রত্যাহার
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোস্তফিহাট এলাকার একটি হিমাগারে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতকর্মীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপির ৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবিতে ঘটনার পরপরই মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের ও গোয়েন্দা শাখার ওসি ফিরোজ হোসেনকে প্রত্যাহারসহ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই হিমাগারটি কয়েক বছর ধরে ভাড়ায় চালাচ্ছিলেন স্থানীয় গোকুন্ডা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি আখেরুল ইসলাম। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় ঢাকায় দায়ের একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি।
স্থানীয়রা জানান, মোস্তফিহাট এলাকার একটি হিমাগারে গতরাতে দাওয়াতে আসেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফিরোজ হোসেনসহ পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, হিমাগারটিতে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আখেরুল ইসলামের ডাকে নয়, হিমাগারের মূল মালিকের আমন্ত্রণেই সেখানে দাওয়াতে গিয়েছিলেন পুলিশ কমিশনার।
বিএনপিকর্মীরা অভিযোগ করেন, বগুড়ার এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ওই হিমাগারটি কয়েক বছর ধরে ভাড়ায় চালান ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক সভাপতি আখেরুল ইসলাম ঢাকায় দায়ের একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি। হত্যাচেষ্টা মামলার আসামির দায়িত্বে থাকা হিমাগারে পুলিশ কর্মকর্তারা দাওয়াতে যোগ দিয়েছেন, এমন খবরের ভিত্তিতে স্থানীয় যুবদলের দুই কর্মী সেখানে গিয়ে ছবি তুললে পুলিশ তাদের বাধা দেয় ও লাঞ্চিত করে। পরে এই খবর পেয়ে সেখানে বিএনপির আরও বেশকিছু নেতাকর্মী উপস্থিত হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে লাঠিচার্জ করা হয়। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন। যাদের মধ্যে দুজনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোকুন্ডা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নয়ন হোসেন বলেন, ছবি তোলার ঘটনায় পুলিশ আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। একপর্যায়ে সদর থানার ওসি আমার বুকে লাথি মেরেছে। আমরা তার বিচার চাই।
সদর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক বিপ্লব হোসেন বলেন, দাওয়াতে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি আখেরুল উপস্থিত আছে শুনে আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। কথাবার্তার একপর্যায়ে সদর থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ আমাদের প্রচণ্ড মারধর করে গাড়িতে তোলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দাওয়াতের সময় স্থানীয় কয়েকজন হিমাগারে গিয়ে ছবি তোলে। ফলে সেই ছবি ডিলিট করতে বলেন সদর থানার ওসি। একপর্যায়ে পুলিশ কমিশনার ও পুলিশ সুপার সেখান থেকে চলে যান। পরে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে কিছুটা মারধরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে উপস্থিত কেউ মামলার আসামি কিনা-এটা আমরা জানতাম না। হিমাগারের দখল নিয়ে দুটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এমন ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার বিকেলে পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ভুল বোঝাবুঝির এ ঘটনায় সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও গোয়েন্দা শাখার ওসি ফিরোজ হোসেনকে গতকালই প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরকে