অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের অপসারণ ও বিচার চাইলেন শিক্ষার্থীরা
নোয়াখালীর সেনবাগের সুলতান মাহমুদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষের অপসারণ ও তাদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকেলে নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। তারপর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
আন্দোলনকারীরা বলেন, সুলতান মাহমুদ ডিগ্রি কলেজে ২০০২ সাল পর্যন্ত নিয়মিত কোনো অধ্যক্ষ ছিলেন না। ২০০৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের প্রচেষ্টায় নিয়মিত অধ্যক্ষ হিসেবে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে তিন মাসের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন ওই অধ্যক্ষ। এরপর ২০০৪ সালে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেন সহিদুল আলম। দায়িত্ব গ্রহণের পর সহিদুল আলম দুর্নীতি, দলীয়করণ ও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। উপবৃত্তির দেওয়ার নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর অর্থ আদায় করতেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা, কলেজ উন্নয়নে জনসাধারণের দেওয়া অর্থ, বিভিন্ন নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা, প্রবেশপত্র বিতরণের সময় টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, অধ্যক্ষ সহিদুল আলম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হওয়ায় নিজ দলীয় (আওয়ামী লীগ) শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়োগ দিয়ে কলেজটিকে শাহবাগী গণজাগরণ মঞ্চ হিসেবে তৈরি করেন। সবশেষ গত ৪ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে কলেজের পুকুর থেকে লোক দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যান তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক শিক্ষক ও কর্মচারী তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গত ৫ আগস্টের পর থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পলাতক রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা।
কর্মসূচিতে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সুলতান মাহমুদ ডিগ্রি কলেজের প্রতিনিধিরা বলেন, ২০২৩ সালে অধ্যক্ষ মোটা অংকের টাকা নিয়ে ডামি প্রার্থী দেখিয়ে উপাধ্যক্ষ হিসেবে শিব প্রসাদ শূরকে নিয়োগ দেন। ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রদের রাজাকার, শিবির, পাকিস্তানি দোসর বলে আখ্যায়িত করাসহ বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দেন। এসব ঘটনায় গত ৬ নভেম্বর ফজলে রাব্বি শামীম নামের একজন শিক্ষার্থী সেনবাগ থানায় শিব প্রসাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
কলেজটির বর্তমান ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বীজবাগ ইউনিয়ন সমন্বয়ক মো. শাহজালাল বলেন, অধ্যক্ষ মো. শহীদুল আলম ও উপাধ্যক্ষ শিব প্রসাদ শূরের বিরুদ্ধে পাহাড়সমান অভিযোগ। তারা অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ, দলবাজ, ফ্যাসিবাদী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চরম বিরোধীতাকারী। আমরা তাদের অপসারণ ও সকল অপকর্মের বিচার চাই।
আরও পড়ুন
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সহিদুল আলম বলেন, আমার নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ যেসব অভিযোগ রয়েছে সেগুলো নিয়ে জেলা প্রশাসক থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ মিললে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আমি সেটি মেনে নিবো।
৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে অধ্যক্ষ বলেন, তিনি ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অফিস করেছেন। এরপর ৩ মাসের মেডিকেল ছুটিতে ছিলেন তিনি। ছুটি শেষ করে আসার পর কলেজে যোগদানের জন্য জেলা প্রশাসককে আবেদন দিয়েছেন, অনুমতি ফেলে কর্মস্থলে যোগদান করবেন বলেও জানান অধ্যক্ষ।
হাসিব আল আমিন/এনএফ