সাংবাদিকরা সত্যিটা লিখলে ফ্যাসিবাদ তৈরি হতো না : জেলা প্রশাসক
বাংলাদেশে সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’ হয়ে উঠতে সংবাদমাধ্যম প্রধান প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। বুধবার চাঁদপুর প্রেসক্লাবে ‘সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০০৪’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেছেন তিনি।
মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “আপনি যখন ব্যক্তি হিসেবে কারও ওপর আঘাত করববেন, তখন বলতে পারি আপনি বলতে পারেন নির্যাতনকারী। কিন্তু সিস্টেম যখন আপনাকে আঘাত করবে। তখন এটি মতবাদের ওপর বিশ্বাসী। এখন এই যে ফ্যাসিবাদের জন্য প্রায়েই আমরা শুনি যে চতুর্থ স্তম্ভ এবং সিভিল সোসাইটির মানুষ বলে ফ্যাসিবাদ কারা তৈরি করেছে। সবাই বলে ফ্যাসিবাদ করেছে পুলিশ, বিচার বিভাগ। ফ্যাসিবাদী তৈরিতে এক নম্বরে যদি কেউ থেকে থাকেন, তারা হলেন রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সাংবাদিকরা। কারণ তারা যদি সত্যিটা লিখতো তাহলে ফ্যাসিবাদ তৈরি হতো না।”
বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবিএম মুসার কথা উদাহরণ দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, “আগে সাংবাদিকদের প্রতি আস্থা ছিল, বিশ্বাস ছিল। কিন্তু এখন যারা আছেন, তারা মনে করেন, আমি যদি কোনো নেতার বিষয়ে লিখি তাহলে ভিউজ বেশি হবে। তাই নিউজের তুলনায় ভিউজ এখন বেশি হয়ে গেছে।”
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের (২০২৪ সাল) সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্তর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন ও সাংবাদিক এম আর ইসলাম বাবু’র যৌথ পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব ,চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজী প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চাঁদপুরের বিশিষ্ট নারী চিকিৎসক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট কুহিনুর বেগম, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডভোকেট ইকবাল বিন বাশার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের (২০২৫ সালের) সভাপতি রহিম বাদশা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের (২০২৫ সালের) সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, গিয়াসউদ্দিন মিলন, চাঁদপুর টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রিয়াদ ফেরদৌস, চাঁদপুরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ লে. মো. শোয়ায়েব, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির চৌধুরীসহ রাজনৈতিক ও চাঁদপুর প্রেসক্লাব নেতারা।
চাঁদপুর প্রেসক্লাব সূত্রে জানা গেছে, ক্লাবের আয়োজনে প্রথমবারের মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার উৎকর্ষে সাংবাদিকতা পুরস্কার করা হয়। এ আয়োজনে বিচারকদের বিবেচনায় এ বছর ছয়জন সাংবাদিক পুরস্কার পেয়েছেন।
পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকরা হলেন, চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিবেদক মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ, টেলিভিশন চ্যানেল এখন টিভির জেলা প্রতিনিধি তালহা জুবায়ের, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর-এর জেলা প্রতিনিধি আল ইমরান শোভন, চাঁদপুর সময় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এম ফরিদুল ইসলাম, প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান বাবলু ও চাঁদপুরের দৈনিক ইলশেপাড় পত্রিকার মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ।
আলোচনা পর্ব শেষে বিজয়ী প্রত্যেক সাংবাদিককে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে চাঁদপুর প্রেসক্লাব সাংবাদিকতা পুরস্কারের জন্যে ৭০টি প্রতিবেদন জমা হয়। এর মধ্যে বাছাই করে জাতীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে জুরি বোর্ড গঠন করে বিচার কাজ সম্পন্ন করা হয়। এর মধ্যে ৬ জন বিজয়ী হন। এছাড়া অতিথিদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে ক্লাবের আজীবন সদস্য ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকারের সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করেন ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক এবং দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি মির্জা জাকির।
বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন, যমুনা টেলিভিশনের ন্যাশনাল ডেস্কের সম্পাদক আসিফ আসানুল, ঢাকা পোস্টের ফিচার সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরমান এবং জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক মাহবুর আলম সোহাগ।
আনোয়ারুল হক/এসএমডব্লিউ