বদলির ৮ মাসেও নতুন কর্মস্থলে যাননি ত্রাণ কর্মকর্তা
বদলি আদেশের ৮ মাস পার হলেও নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিত কুমার সরকার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ ও আগের রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে নিজের ইচ্ছেমতোই আগের কর্মস্থলে থেকে গেছেন। আর এ নিয়ে ওই দপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল উপ-সচিব (ত্রাণ প্রশাসন-২) মুনিরা সুলতানা স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বরিশালের জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিত কুমার সরকারকে সাতক্ষীরা জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা করে পাঠানো হয়। বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা পদে বদলি করা হয় মাগুরা জেলার মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে। ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যদি রণজিৎ কুমার সরকার যোগদান না করেন তাহলে অন্যথায় ১৩ এপ্রিল থেকে তিনি স্ট্যান্ড রিলিজ বলে গণ্য হবেন।
সেই আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এখনো বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা পদে রয়ে গেছেন রণজিত কুমার সরকার।
জানা গেছে, বদলির বিষয়টি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অস্থিরতার মধ্যে ধামাচাপা দেন। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বদলির আদেশ স্থগিত করতে মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ঊর্ধ্বতন দপ্তরে অর্থ দিয়ে লবিং করছেন বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে।
কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি বরিশাল না ছেড়ে যাওয়ায় কর্মকর্তাদের মাঝে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে। অনেকেই তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আপত্তি তুলছেন। তিনি বরিশালে থাকতে চাইছেন এখানে তিনি বেশ কয়েকটি ব্যবসায় জড়িয়েছেন।
বদলির বিষয়টি স্বীকার করে রণজিত কুমার সরকার বলেন, আমাকে বদলি করা হয়েছিল। বরিশালে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মাগুরার ত্রাণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে। বদলির আদেশের পর তিনি (মোহাম্মদ নুরুজ্জামান) মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন তার হার্টে রিং পরানো, তিনি অসুস্থ। তাছাড়া বরিশাল দুর্যোগপ্রবণ এলাকা হওয়ায় এই অঞ্চলে দায়িত্ব পালনে ভীত। এদিকে সাতক্ষীরা আমাকে বদলি করা হলেও বদলির আদেশের কিছুদিন পরে সেখানে নতুন একজন কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়।
রণজিত কুমার সরকার বলেন, সাধারণত বরিশাল থেকে রিলিজ হলে এখানে নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এখানে নতুন কেউ না আসায় তা সম্ভব হয়নি। এদিকে মন্ত্রণালয় থেকেও আমাকে মৌখিকভাবে এখানে থেকেই কাজ করতে বলেছে। ওই সময়ের ডিসি স্যারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, কাজ করতে।
মাগুরার সাবেক ত্রাণ কর্মকর্তা বরিশালে না এলেও পদোন্নতি পেয়ে উপপরিচালক হয়ে অধিদপ্তরে যোগ দিয়েছেন জানিয়ে রণজিত কুমার সরকার বলেন, আমার বদলির আদেশ বাতিল হয়ে পুনর্বহালের কোনো নির্দেশ আসেনি। আদেশটি ওভাবেই ঝুলে আছে।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (টেলিকম) মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, আমি মাগুরার জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছিলাম। আমাকে বদলি করা হয়েছিল বরিশালে। আমার শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে বিষয়টি অধিদপ্তরকে অবহিত করি। এজন্য আমার বদলির আদেশ বাতিল করা হয়েছিল। বদলির আদেশ বাতিল না করলে আমাকে বরিশালে যোগ দিতে হত। এটি চাকরির বিধান। আদেশ অমান্য করে কোথাও থাকা যাবে না।
বরিশালের কর্মকর্তা বদলির আদেশ হওয়ার পরও এখনো থাকছেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি তার বদলির আদেশ বাতিল না হয় তাহলে তিনি কীভাবে থাকছেন তা আমিও বলতে পারছি না।
বিষয়টি নিয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) লুসিকান্ত হাজং বলেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাকে বদলি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। আর এর সঙ্গে স্ট্যান্ডরিলিজের বিষয় জড়িত থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের (জেলা প্রশাসন) ছাড়পত্রের কোনো সর্ম্পক নেই। নির্দেশনা তাকে মানতে হবে।
বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) রাসেল সাবরিন বলেন, কাউকে বদলি করা হলে তাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে। কোনো কারণেই আগের কর্মস্থলে থাকতে পারবেন না। তাকে যেতেই হবে। বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি এবং এমন কোনো ঘটনা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা রণজিত কুমার সরকার এর আগে বরগুনা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পদে একটানা ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করে বিশেষ সুবিধা তিনি নেন। সেই সঙ্গে তার দফতরে একক আধিপত্যের কর্তা বনে যান। বরগুনায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাস্তবায়িত একাধিক প্রকল্পে বরাদ্দ ১৮ লাখের মধ্যে ১৭ লাখ দুর্নীতি করে নিজে আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় ২০১৬ সালে রণজিত কুমার সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হলে তদন্তে সত্যতা পায় দুর্নীতি দমন কমিশন। এরই প্রেক্ষিতে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কারাগারে যান রণজিত কুমার সরকার।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর