নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন, এক ডোজ কিনে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন রোগীরা
জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। বিনামূল্যে দেওয়া এই ভ্যাকসিন নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় এক ডোজ ভ্যাকসিনের ভয়েল কিনে ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন অন্য রোগীরে সঙ্গে।
রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন রোগীদের সরবারহ করা হয়ে থাকে। গত ২৯ ডিসেম্বর চাহিদার বিপরীতে ভ্যাকসিন এসেছে মাত্র ২০০ ভায়াল। এরপর ৩ জানুয়ারি থেকে পুরোদমে বন্ধ হয়ে যায় ভ্যাকসিন সরবারহ। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভ্যাকসিনের চাহিদা থাকে ২৮০ থেকে ৩০০টির মতো। সেই হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় ৯ হাজার পিস ভ্যাকসিনের প্রয়োজন রোগীদের জন্য।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, উপজেলা পর্যায়গুলোতে নেই জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন। হাসপাতালেও এসে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই রোগীদের অতিরিক্ত দামে বিভিন্ন কোম্পানির ভ্যাকসিন বাইরের ফার্মেসিগুলো থেকে কিনে নিতে হচ্ছে। তাদের দাবি, দ্রুত যেন জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন বিনামূল্যে রোগীদের সরবারহ করা হয়।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) নগরীর মেহেরচন্ডি এলাকায় বাড়ির পাশে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হন রাকিবুল আলী (১৮)। তার একদিন পর সোমবার (৬ জানুয়ারি) রামেক হাসপাতালে আসেন জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিতে। কিন্তু বিনামূল্যে সরবারহ না থাকায় তাকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন কিনে নিতে হয়েছে।
তিনি বলেন, এলাকার অনেকেই বলেছি জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন হাসপাতালে বিনামূল্যে দেয়। কিন্তু এসে শুনলাম সরবারহ নেই। কাছে টাকা ছিল না, তাই বাড়িতে ফোন দিয়ে টাকা পাঠাতে বলি। তারপর ভ্যাকসিন কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরি।
আরও পড়ুন
সাজেদা বেগম নামের এক নারী তার মেয়ে সাইলা খাতুনকে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দিতে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, গত মাসে নাতনিকে নিয়ে এসেছিলাম জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন দিতে। তখন ভ্যাকসিন কিনতে হয়নি। কিন্তু আজ এসে শুনছি হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেই, বাইরে থেকে কিনে নিতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, স্বামী রিকশা চালায়। আমাদের পক্ষে ৫০০-৬০০ টাকা খরচ করে একবার ভ্যাকসিন দেওয়া কি সম্ভব? একজন রোগীকে চারবার ভ্যাকসিন দিতে হয়। আমাদের পক্ষ এতো টাকা খরচ করা কঠিন হয়ে যায়।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার সাদিকুল ইসলাম (১০) রামেক হাসপাতালে বাবা রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে এসেছে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন নিতে। তার বাবা রাকিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন সরবারহ বন্ধ। তাই বাইরে ফার্মেসি থেকে ভ্যাকসনি কিনে আনতে হয়েছে। আক্রান্ত চারজনের টাকা একসঙ্গে করে ভ্যাকসিন কিনে তারপর ছেলেকে দিয়েছি। ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জসহ ১২২ টাকা করে পড়ছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, জানুয়ারি থেকে পুরোদমে বন্ধ হয়ে গেছে ভ্যাকসিন সরবারহ। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ভ্যাকসিনের চাহিদা ২৮০ থেকে ৩০০টির মতো। সেই হিসেবে প্রতিমাসে প্রায় ৯ হাজার পিস ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয়। আপাতত ভ্যাকসিন সরবারহ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। আমরা অফিসিয়ালি চিঠি পাঠিয়েছি। হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। আশা করছি দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।
শাহিনুল আশিক/আরকে