ঝিনাইদহে ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধেছেন কৃষকরা
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের রাজ্য খ্যাত ঝিনাইদহে এবার চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনে আশাবাদী কৃষকরা। অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে যথাসময়ে কৃষকরা এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন।
গত বছরের তুলনায় এবার ভুট্টা চাষে কৃষকরা বেশি ঝুঁকে পড়ছেন। ভুট্টা চাষে খরচ কম, অথচ ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষের আগ্রহ বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও। জেলার মহেশপুর ও সদর উপজেলাতে সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে জেলায় ১৮ হাজার ১৩৪ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। যা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ২৪৫ টন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে, ৪০২৮ হেক্টর, কালীগঞ্জ ২০৭৫ হেক্টর, কোটচাঁদপুর ৩৯৭০ হেক্টর, মহেশপুর ৬৮২৫, শৈলকুপায় ৭২৫ হেক্টর, হরিণাকুন্ডু ১১২৪ হেক্টর।
বৈডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাজাহান আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকার যে সব জমিতে পূর্বে বোরো চাষ করা হতো সে সব জমিতে এবার ভুট্টা চাষ করছি। বোরো চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি অথচ যখন ধান কাটা মাড়াই শুরু হয় তখন ধানের বাজারে ধস নামে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচই ওঠে না। কিন্তু ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম দামও তেমন বেশি থাকে। এ জন্য আমরা ভুট্টা চাষে এবার ঝুঁকে পড়েছি।
হলিধানী গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে ধানের চাষ বেশি। তবে ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় এবার নতুন করে ভুট্টা চাষ শুরু করলাম।
নাটাবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক বাবলু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুট্টা চাষে খরচ একটু বেশি হলেও ফলন ভালো হয় এবং বাজারে দামটাও ভালো পাওয়া যায়। এ কারণে ধানের জমিতে ভুট্টা চাষ করি। আর কৃষি অফিস থেকে যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে, সেই বীজ না লাগিয়ে বাজার থেকে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা লাগানো হয়েছে। অফিস থেকে যে সার দেওয়া হয়েছে সেগুলো পর্যাপ্ত না। তবে খুচরা বাজারে সার ও কীটনাশকের দাম কম হলে সবার জন্য ভালো হতো।
সাগান্না ইউনিয়নের বৈডাঙ্গা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফেরদৌস হায়দার জুয়েল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার গত বছরের তুলনায় আমাদের এলাকায় ভুট্টার আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। আশা করছি ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমরা নিয়মিত কৃষকদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূর-এ- নবী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সব ধরনের ফসল উৎপাদনে আমরা কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরা যেন সহজে কৃষি উপকরণ পায়। বিশেষ করে বীজ, সার ও তেলের জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। এবার ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুট্টা চাষ লাভজনক এবং সহজলভ্য হওয়ায় কৃষকরা দিনে দিনে এই চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। আবার অনেক জায়গায় ভুট্টা গাছ দিয়ে সাইলেস (গোখাদ্য) তৈরি করা হচ্ছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। আশা করি এ বছর আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরকে