সাতক্ষীরায় বাড়ছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ, হাসপাতালে ভিড়
পৌষ মাসে শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাতক্ষীরায় ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে সর্দি, কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া বেশি দেখা দিচ্ছে। সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ৩০ শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৪০ জন শিশু। একইভাবে সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১৪টি বেডে ৩৫ জন শিশু ভর্তি আছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র ৫টি শয্যার জন্য ভর্তি রয়েছে ২৪ থেকে ৩৫ জন রোগী। ফলে মেঝেতে ঠাঁই নিতে হচ্ছে অনেককে।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. মো. আবুল বাশার আরমান জানান, শীতের কারণে শিশুদের জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এবং রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন শিশুকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা যায়, শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের দীর্ঘ অপেক্ষা। আশাশুনির বকচর গ্রামের রাবেয়া আহমেদ তার ছয় মাস বয়সী মেয়েকে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।
তিনি বলেন, প্রথমে গ্রামের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরে অবস্থা খারাপ হলে এখানে ভর্তি করাই।
তুলসি খাতুন দেবহাটা থেকে তার ১৯ মাস বয়সী সন্তান আয়াসকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, সাত-আট দিন ধরে কাশি ও ঠান্ডা কিছুতেই কমছে না। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আশিক আহমেদ বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। তাদের গরম কাপড়, মোজা এবং পরিষ্কার পানি দিতে হবে। বাসি বা খোলা খাবার খাওয়ানো যাবে না।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (শিশু বিশেষজ্ঞ) ডা. সামছুর রহমান জানান, শীতের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিদিনই শিশু ও বয়স্করা বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কোল্ড ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া অন্যতম এসব রোগের মধ্যে।
তিনি বলেন, এই শীতে শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া জরুরি। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম জানান, ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে আমরা সতর্ক আছি। এখনো পর্যন্ত কোনো শিশুর মৃত্যু হয়নি। আমরা প্রতিদিন শিশু হাসপাতালে ১৫০ জনের বেশি রোগীকে সেবা দিচ্ছি। অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে। গরম পোশাক ও মোজা পরাতে হবে। বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে। শীতের এই দুঃসময়ে শিশুদের প্রতি যত্নশীল হলে ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের সুরক্ষায় আরও সতর্ক থাকা।
ইব্রাহিম খলিল/আরএআর