কাজ রেখে উধাও ঠিকাদার, আড়াই বছরেও শেষ হয়নি বীর নিবাসের কাজ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে আড়াই বছরেও শেষ হয়নি বীর নিবাসের কাজ। কোনোটির কাজ ৭০ শতাংশ, কোনোটির কাজ ৮০ শতাংশ করে ফেলে গেছেন ঠিকাদার।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বীর নিবাসের ঘর পেয়ে যেন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরের হাট এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক। বিছানায় শয্যাশয়ী এই মুক্তিযোদ্ধা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস এ ঘরে ফেলতে পারবেন কিনা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আব্দুল খালেকের মতো বীর নির্বাসের ঘর নিয়ে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন থানাহাট ইউনিয়নের বালাবাড়ী হাট কিসামত বানু এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের রানীগঞ্জ বাজার এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা রিয়াজুল হক সর্দার, মদনমোহন এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ও ভাটিয়া পাড়ার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী সাহের বানু বেগম।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী বলেন, বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি। ইউএনও ও পিআইও সাহেব শুধুই আশ্বাস দিয়েছেন। উপয়ান্ত না পেয়ে অসমাপ্ত ঘরের দরজা ও জানালায় টিনের বেড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে।
জানা যায়, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ২০২২ সালের ১৩ আগস্ট চিলমারী উপজেলায় দ্বিতীয় দফায় ৩৫টি বীর নিবাস নির্মাণের বরাদ্দ দেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। উপজেলা প্রশাসন, ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস বাস্তবায়নের কাজ করছে। এক তলাবিশিষ্ট ৭৩২ বর্গফুট আয়তনের বীর নিবাসের এই বাড়িতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার কক্ষ (ড্রয়িংরুম), একটি খাওয়ার কক্ষ (ডাইনিং), একটি রান্নাঘর, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও দুটি শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার ৩৫টি বীর নিবাসের মধ্যে ৩০টির কাজ শেষ হলেও আড়াই বছরেও বাকি পাঁচটির কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদার কোনোটির ৭০ শতাংশ, কোনোটির ৮০ শতাংশ কাজ করার পর কাজ ফেলে চলে গেছেন।
৫টি ঘরের কাজ করেন ঠিকাদার নুরুজ্জামান আজাদ জামান। তিনি চিলমারী উপজেলা যুবলীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান। ওই ৫টি ঘরের মোট বরাদ্দ ছিল ৭০ লাখ ৫১ হাজার ৯১০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন বীর নিবাসের দরজা, জানালা লাগানো হয়নি। ইলেকট্রিক সংযোগ না দেওয়াসহ করা হয়নি রং। ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ ওই ঠিকাদার কাজ শেষ না করেই তিন দফার বিলের টাকাও উত্তোলন করেছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফ্ফর রহমান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজটি যথাসময়ে শেষ না করে মুক্তিযোদ্ধাদের হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নুরুজ্জামান আজাদ জামানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সোহেল রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ওই ঠিকাদারকে পরপর দুটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এএমকে