চলছে ট্রেন, তবে থামছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে টানা ৪৯ দিন বন্ধ থাকার পর আবারও ট্রেনের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। সোমবার (২৪ মে) সকাল থেকে সারাদেশের মতো পূর্বাঞ্চলেও বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ও কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে পূর্বাঞ্চলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে কোনো ট্রেন যাত্রাবিরতি করছে না।
সাম্প্রতিক তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত রেলওয়ে স্টেশনের মেরামত কাজ শুরু না হওয়ায় কোনো ট্রেন যাত্রাবিরতি করতে পারছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকা ও লেভেল ক্রসিংগুলো অতিক্রমের জন্য ট্রেনচালকদের গতিসীমা ঘণ্টায় ১৬ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনটি আন্তঃনগর ও একটি কমিউটার ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে সকালে নোয়াখালী থেকে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর মহানগর প্রভাতী ও সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেস এবং দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিক্রম করেছে ঢাকা থেকে আসা চট্টগ্রামগামী কর্ণফুলী কমিউটার ট্রেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। পুলিশের দাবি, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ওই তাণ্ডব চালায়। তাণ্ডবের প্রথম দিনই (২৬ মার্চ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মোদি বিারোধী বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনার পর ২৭ মার্চ থেকে পূর্বাঞ্চল রুটে চলাচলকারী সকল আন্তঃনগর ট্রেনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে নির্ধারিত যাত্রাবিরতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সিগন্যাল বোর্ড ও রেললাইনের মোটর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। লেভেল ক্রসিং গেটের লকিং সিস্টেমও সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে তাণ্ডবকারীরা। এতে করে স্টেশনে ট্রেন যাত্রাবিরতি করতে পারছে না। কবে নাগাদ ট্রেনের যাত্রাবিরতি শুরু হবে, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। প্রতিদিন অন্তত ২৮ জোড়া আন্তঃনগর, মেইল ও কমিউটার ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করত।
আপাতত ট্রেনচালকদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিক্রমের ক্ষেত্রে ঘন ঘন হুইসেল বাজিয়ে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। সেক্ষত্রে লেভেল ক্রসিংগুলো অতিক্রম করার জন্য ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিসীমা ১৬ কিলোমিটার বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার মো. মাঈনুল হক বলেন, ‘সিগন্যাল সিস্টেম এবং রেললাইনের মোটর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ায় ট্রেনের যাত্রাবিরতি বন্ধ রয়েছে। এখনো পর্যন্ত এগুলোর মেরামত বা পুনরায় স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে সেটিও বলা যাচ্ছে না। সেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিক্রমের ক্ষেত্রে ট্রেনচালকদের ঘন ঘন হুইসেল বাজিয়ে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে’।
এর আগে গত ১২ এপ্রিল তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শেন এসে রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজান সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের দুর্ভোগ আরও কিছুদিন বাড়বে। কারণ স্টেশনের যেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাক করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। সিগন্যালিং ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এগুলো ঠিক করে আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে যেন ট্রেন থামাতে পারি আমরা সেই চেষ্টা করব’।
আজিজুল সঞ্চয়/এসপি