বেহাল দশা, ব্যবহার অনুপযোগী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড
বাসস্ট্যান্ডের অভ্যন্তরে বড় বড় গর্ত। নেই ড্রেনেজ ব্যবস্থা, চারদিকের নিরাপত্তা দেয়াল ভাঙা, নেই যাত্রী ছাউনিসহ যাত্রীদের জন্য টয়লেট ব্যবস্থা।এমনই বেহাল দশা ভোলা সদর পৌরসভায় প্রায় ৩৬ বছর আগে নির্মিত হওয়া বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ডের। বর্ষা এলে দুর্ভোগ বাড়ে কয়েক গুণ। দীর্ঘদিন ধরে বাসস্ট্যান্ডটি সংস্কার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ বাসচালক, যাত্রী ও সংশ্লিটরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩ একর জমির ওপর ১৯৮৮ সালের দিকে সদর পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পৌরসভার গেট সংলগ্ন এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের নামে এ বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালের দিকে বাসস্ট্যান্ড দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাস চলাচল শুরু হয়। এখান থেকে ভোলার অভ্যন্তরীণ ৫টি রুট ভোলা-দৌলতখান, ভোলা-তজুমুদ্দিন, ভোলা-চরফ্যাশন, ভোলা-ইলিশা, ভোলা-ভেদুরিয়া রুটে দৈনিক অন্তত ২০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু নির্মাণের ৩৬ বছরেও বাসস্ট্যান্ডটি সংস্কার করা হয়নি।
সরেজমিনে বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, কার্যত এটি একটি পরিত্যক্ত স্থাপনা। বাসস্ট্যান্ডের অভ্যন্তরে বাস চলছে হেলেদুলে। বাসস্ট্যান্ড থেকে ভোলার বিভিন্নস্থানে যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষমান যাত্রীদের জন্য নেই কোনো যাত্রী ছাউনি। তাই বাধ্য হয়েই বাসের জন্য অপেক্ষমান যাত্রীরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন মূল রাস্তার পাশে। যাত্রীদের জন্য নেই টয়লেটের ব্যবস্থা। অন্যদিকে বাসস্ট্যান্ডের চারিদিকের সীমানা প্রাচীর ভাঙা থাকায় প্রায় সময় চুরি হয় বাসের মূল্যবান মালামাল। বাসস্ট্যান্ডটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ার পরও বিকল্প কোনো বাসস্ট্যান্ড না থাকায় এখনও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে।
ভোলা-চরফ্যাশন ও ভোলা তজুমদ্দিন রুটের নিয়মিত যাত্রী মো. সিরাজ বাবুল সাজি। তারা দুজন ঢাকা পোস্টকে জানান, দেখে বুঝার উপায় নেই এটি বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের নামে গড়ে তোলা বাসস্ট্যান্ড। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বাসস্ট্যান্ডটির বেহাল দশা। আমরা যে বাসস্ট্যান্ডে এসে বসে অপেক্ষা করব, সেই সুবিধাও নেই। মোট কথায় আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। আমরা চাই বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের নামে গড়ে তোলা বাসস্ট্যান্ডটি উন্নতমানের বাসস্ট্যান্ড করা হোক।
হালিমা আক্তার নামে এক নারী বলেন, অন্যান্য বাসস্ট্যান্ডে মহিলাদের জন্য নামাজ ও টয়লেটসহ নানান সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু ভোলা জেলা সদরের বাসস্ট্যান্ডে সেই ধরনের কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। তাছাড়া বসার মতো কোনো ব্যবস্থাও নেই। তাই বাধ্য হয়েই ছোট ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।
বাসের চালক মো.হারুন ও মোতালেব বলেন, পুরো রাস্তায় গাড়ি চালালেও কোনো চিন্তা থাকে না। কিন্তু বাস নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের সামনে এলেই সব চিন্তা মাথায় ভর করে। এর কারণ হলো বাসস্ট্যান্ডে ভেতরে অনক বড় বড় গর্ত, সেই গর্তে গাড়ি চাকা পড়লে অনেক সময় গাড়ির স্প্রিংসহ নানা পার্টস ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।এতে গাড়ির মালিকের অনেক কথা শুনতে হয়। তাছাড়া এই বাসস্ট্যান্ডে চারপাশে যে সীমানাপ্রাচীর রয়েছে সেটিও ভাঙা। রাতে আমরা বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি রেখে গেলে গাড়ি থেকে তেল মবিলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়। কাউকে ধরতেও পারি না। চোর নিরাপদে বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।
ভোলা বাস মালিক সমিতি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনতাসীর আলম রবীন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্মাণের পর থেকে আর কখনোই বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ডটি সংস্কার করা হয়নি।বাসস্ট্যান্ডে পাবলিক টয়লেট নেই,এতে অসুস্থ ও বয়স্ক যাত্রীরা অনেক সমস্যায় পড়েন। তাছাড়া বাউন্ডারি ওয়াল নেই,এতে বাসের মুল্যবান মালামাল চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি আধুনিক বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এসব দুর্ভোগ লাঘবে অতিদ্রুত বাসস্ট্যান্ড সংস্কারের দাবিও জানান তিনি।
নির্মাণের দীর্ঘ ৩৬ বছরে পেরিয়ে গেলেও বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষন না হওয়ায় জরাজীর্ণ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ভোলা সদর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.জসিম উদ্দিন আরজু বলেন, বর্তমানে এটি জরাজীর্ণ স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। যাত্রীরা নানান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না।বাসস্ট্যান্ডটি চালু রাখার জন্য ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাসস্ট্যান্ডের অভ্যন্তরীণ সড়ক, ড্রেনেজ সড়ক বাতিসহ বিভিন্ন কাজের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি চাহিদা পাঠিয়েছি। অনুমোদর গেলে সমস্যাগুলোর সমাধান করা যাবে।এছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ড আধুনিক করার জন্য আমরা পরিকল্পনা করছি।
আরকে