রক্তমাখা জামা বুকে নিয়ে শোকে দিন পার করছেন সুমন হাসানের পরিবার
সুমন হাসানের রক্তমাখা জামা নিয়ে শোকে দিন পার করছেন তার পরিবার। বংশের প্রদীপ একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন অসুস্থ বাবা বিল্লাল হোসেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে সাভার থানা রোডের সামনে গত বছরের ৫ আগস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সুমন হাসান (১৯)।
সুমন জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বিল্লাল হোসেনের ছেলে। তিনি কখনো ব্যাটারি চালিত ইজিবাজইক আবার কখনো তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে দিশেহারা তার পরিবার। সুমন হাসানের মৃত্যুর পর থেকেই বাবা বিল্লাল হোসেনের পরিবারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুমন হাসানের বয়স যখন ১০ বছরে তখন তার মা মারা যান। পরে বাবা বিল্লাল হোসেন আবার বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সংসারে সুমনের ঠাই না হওয়ায় মায়ের মৃত্যুর পর থেকে দাদী ও ফুফুর কাছেই থাকতেন তিনি। বাবা বিল্লাল হোসেন অসুস্থ হলে ছোট বয়সেই সংসারের হাল ধরেন সুমন। পরিবারের অর্থের যোগান দিতে জীবিকার তাগিদে চলে আসেন ঢাকায়। শুরুতে মানুষের বাড়িতে কাজ করলেও কয়েক বছর আগে গার্মেন্টসে চাকরি নেন। তার উপার্জনেই চলছিল বৃদ্ধ দাদীর চিকিৎসা আর বাবার সংসারের খরচ।
আরও পড়ুন
জানা গেছে, গত বছর আগস্টের ৫ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে সাভার থানা রোডের সামনে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সুমন হাসান। সারাদেশে রাস্তায় গাড়ি না চলা ও বিভিন্ন কারণে অনেক কষ্টে তার পরিবার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নেন। সুমন হাসানের পরিবারের কবর দেওয়ার জায়গা না থাকায় মরদেহ দাফনেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরে মরদেহ বাড়ির উঠানে রেখে বাড়ি থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে একটি কবরস্থানের পাশে ৩০ হাজার টাকায় এক খণ্ড জমি কিনে তাকে দাফন করা হয়। সুমন হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় তার খালু মো. নিপু আলী বাদী হয়ে সাভার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
সুমনের ফুফু মর্জিনা বেগম বলেন, ছোট থেকে অনেক কষ্টে সুমনকে মানুষ করছি। একটু বড় হলে আমার মাসহ তারা ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন কাজ কর্ম করে সংসারটা চালাইতো। এতেই আমাদের শান্তি ছিল। শান্তির ঘরে গত ৫ আগস্টে আমার ভাইয়ের ছেলেকে গুলি করে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেল, এর আমরা বিচার চাই।
নিহতের দাদী হালিমা খাতুন বলেন, আমার নাতি আন্দোলনে গিয়েছিল। শেখ হাসিনা আমার নাতিরে মাইরে (মেরে) পলায়া (পালিয়ে) গেছে, প্রাণ তো আর ফিরে পাবো না। শেখ হাসিনার বিচার চাই।
সুমন হাসানরে বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্ট আমার ছেলে সুমন হাসান পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। মেডিকেল নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। বাড়িতে আনার জন্য অ্যাম্বুলেন্স, কোনো কিছুই পাই নাই। পরে অনেক কষ্ট করে হাতে পায়ে ধরে একটি পিক-আপ গাড়ি দিয়ে মরদেহ বাড়িতে আনি। আমাদের জায়গা জমি না থাকায় এক জায়গায় ৩০ হাজার টাকা দিয়ে জমি কিনে সেখানে দাফন করি। অন্যের ছেলে দেখলে আমার অনেক কষ্ট হয়। আমার ছেলে থাকলে তো আমাকে বাবা বলে ডাকতো, এখন আমারে তো কেউ ডাকে না। শেখ হাসিনা নামে মামলা করছি। তার যেন ফাঁসি হয়।
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিন্নাত শহীদ পিংকি বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত সুমন হাসানের পরিবারকে সরকারিভাবে কিছু সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সরকারিভাবে আরও কোনো সহায়তা পেলে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
মুত্তাছিম বিল্লাহ/এমএসএ