মুড়িকাটা পেঁয়াজে আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় লোকসানে কৃষকরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মৌসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। তবে দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষকরা। তারা বলছেন, বেশি দামে আগাম জাতের কন্দ পেঁয়াজ কিনে লাগানোর কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কম। তাছাড়া আমদানির কারণে ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না পেঁয়াজের। বর্তমানে বাজারে যে দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তাতে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না।
কৃষকদের দাবি, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেশে যেন পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকে।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন ফসলের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলছেন। মাঠেই তারা এই পেঁয়াজ বাছাই করে রোদে শুকিয়ে নিচ্ছেন। নারী শ্রমিকেরাও পেঁয়াজ তোলার কাজে সহযোগিতা করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর বিপরীতে চাষ হয়েছে ৪ হাজার ৩৫ সেক্টর জমিতে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর, শিবগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর, নাচোল উপজেলায় ১৪০ হেক্টর, গোমস্তাপুর উপজেলায় ১৭০ হেক্টর ও ভোলাহাট উপজেলায় ২৪০ হেক্টরে পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।
আরও পড়ুন
পেঁয়াজ চাষি বাবলু বলেন, এবার ১৫ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম। পেঁয়াজের বীজ কিনেছিলাম ৬ হাজার টাকায় আর পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১৩০০ থেকে ১৬০০ টাকা মণে। ফলে আমাদের লোকসানে পড়তে হচ্ছে। তাই সরকার যদি উদ্যোগ নেয় তাহলে আমরা বাঁচতে পারব। তা না হলে আমরা শেষ। সার ও বীজের দাম বেশি তাহলে আমরা কীভাবে বাঁচবো? আমাদের সবই লস।
তিনি আরও বলেন, সরকারকে উদ্যোগ নিয়ে সার ও বীজের দাম কমাতে হবে। তাহলে আমরা টিকতে পারবো। এছাড়াও বিদেশ থেকে যেমন- ভারত, চীন ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আসছে। এই পেঁয়াজ না এলে আমরা পেঁয়াজের কিছুটা দাম পাবো।
আরেক পেঁয়াজ চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, চার বিঘার মতো জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছিলাম। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। বৃষ্টি ও দেশের পরিস্থিতির কারণে আমরা এখন বিঘা প্রতি পেঁয়াজে পাচ্ছি ৬০ হাজার টাকার মতো। তাই বিঘা প্রতি আমাদের প্রায় ৬০ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ওয়ালিদ হাসান নামে আরেক কৃষক বলেন, আমি আড়াই বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। পেঁয়াজ রোপণ করার আগে পেঁয়াজের বীজের দাম ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর এখন সেই পেঁয়াজের দাম হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর কৃষক যদি এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে তাহলে বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লোকসান হবে। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি পেঁয়াজের দাম যেন ৬০ থেকে ৭০ টাকার মতো থাকে। কারণ পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা থাকায় কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি মোটেই কাম্য নয়।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সমীর চন্দ্র ঘোষ জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৭২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, এই মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৮০০ হেক্টরে। গত বছর এটি ছিল ২ হাজার ৯৯৫ হেক্টর। এছাড়া এ বছর আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৪ হাজার ৩৫ হেক্টরে পেঁয়াজ আবাদ হচ্ছে। এবার আমাদের পেঁয়াজের ফলনও ভালো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কন্দ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ হয়। এই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। আবার আগাম জাতের কন্দ পেঁয়াজ বাজার আসার সময় এই পেঁয়াজের দাম বেশি ছিল। তাই অনেক কৃষক মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী ছিলেন। এতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৩৫ হেক্টর বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। আমরা আগেও দেখেছি যে ফসলের দাম বেশি পায় কৃষক সেই ফসল উৎপাদনে তারা ঝুঁকে যায়। ফলে এ ফসলের আবাদও বাড়ে এবং উৎপাদন বাড়ে। যেহেতু এটি একটি পচনশীল দ্রব্য এবং এই পেঁয়াজটি সংরক্ষণ করা যায় না যার ফলে পেঁয়াজগুলো একসঙ্গে বাজারে আসার কারণে পেঁয়াজের বাজার দর হঠাৎ করে কমে গেছে। এতে এটি ভোক্তাদের জন্য ভালো হলেও যারা এটি উৎপাদন করেছে তাদের জন্য এটি লাভজনক হয়নি। তারা যে দামটি আশা করেছিলেন সেই দামটি পাচ্ছেন না। এছাড়া আমাদের পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তাই আশা করছি যে পেঁয়াজটা সংরক্ষণ উপযোগী হবে সেটি কৃষক ভাইয়েরা সংরক্ষণ করে বিক্রি করতে পারবে এবং তারা কাঙ্ক্ষিত ভালো দাম পাবে।
আশিক আলী/এমএ