৪ ঘণ্টা চা বিক্রি করে প্রতিদিন ২২শ টাকা আয় করেন মিলন
‘চা খাবেন চা’ বলে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন মিলন খান। এক হাতে বড় একটি চায়ের ফ্লাক্স, আরেক হাতে রাখা ছোট একটি ব্যাগ। সেই ব্যাগের ভেতরে রয়েছে ওয়ান টাইমের ছোট ছোট কাপ। তাকে সম্মতি জানাতেই তিনি দ্রুত হাত বাড়িয়ে ধরিয়ে দিলেন সেই ছোট কাপ ভর্তি চা। বেশ কয়েকদিন থেকে উত্তরে বেড়েছে শীতের দাপট। এই শীতে খোলা মাঠ বা উদ্যানে সন্ধ্যার আড্ডায় বা খোশগল্পে ধোয়া ওঠা এক কাপ মসলাযুক্ত লাল চা যেন একটা আলাদা প্রশান্তি আনে। চুমুকে একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করলো। চা খেতে খেতেই শুরু হলো তার সঙ্গে গল্পের পালা।
মিলন খান রাজশাহীর মতিহার থানার মির্জাপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে। ক্যাম্পাসের পরিচিত শিক্ষার্থীদের কাছে মিলন মামা হিসেবেই পরিচিত তিনি। ৪৫ বছর বয়সী মিলন খানের আয় রোজগার ভালো হলেও এখনও বিয়ে করেননি। অবশ্য বিয়ে না করার কারণও জানিয়েছেন তিনি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ এই মসলাযুক্ত লাল চা বিক্রি করে প্রতি ৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ২শ টাকা আয় করেন মিলন। এর বাইরেও অটোরিকশা চালিয়ে আয় করেন প্রতিদিন ৩-৪শ টাকা।
আরও পড়ুন
গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা বেলার কথা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন শীতকালীন ছুটি চলছে। ছুটির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে (টিএসসিসি) চলছে পিঠা উৎসব। কয়েকজন মিলে সেদিকে যাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে বের হলেও প্রথমে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ যাওয়া হলো ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার এলাকায়। যদিও সেদিন সেখানে যাদেরকে দেখা গেল তাদের বেশিরভাগই বাইরে থেকে ঘুরতে এসেছেন এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না। ছুটির দিনটাতে একটু বিনোদনের জন্য পরিবার নিয়ে এসেছেন বেড়াতে।
সেখানেই মিলন মামার চায়ের সঙ্গে কথা হলো তার পারিবারিক বিষয় নিয়ে। তিনি জানান, তারা ৪ ভাই ও ৭বোন। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অটোরিকশা চালান। এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ হয়ে চা বিক্রি করেন।
মিলন খান বলেন, সকালে মালিকের কাছ থেকে দিন জমা হিসেবে অটোরিকশা ভাড়া নেই। বিকেল পর্যন্ত সেটা চালিয়ে জমা বাদ দিয়ে ৩-৪শ টাকা আয় হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে মসলা চা বিক্রি করি।
প্রতিদিন ফ্লাক্সে করে ২৮০ কাপ চা বিক্রি করেন তিনি। প্রতিকাপ চা বিক্রি করেন ১০টাকা করে। আর চাপাতা, চিনি, মসলা ও ওয়ানটাইম কাপসহ তার খরচ হয় ৬০০ টাকার মতো। প্রতিদিন বিক্রি শেষে তার আয় হয় ২হাজার ২শ টাকার মতো।
মিলন খান তার জীবনের গল্প বলতে গিয়ে জানান, ১১ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয় হলেও তিনি ছাড়া বাকিরা সবাই বিয়ে করেছেন। এখনও বেঁচে আছেন তার বাবা-মা। বাবাও বাড়ির সামনে চায়ের দোকান করেন। ভাই-বোনেরা সবাই সবার মতো আলাদা, তিনি আছেন বাবা-মার সঙ্গেই। মিলন প্রতিদিন আয় করা টাকা জমাচ্ছেন বাড়িতে পাকা স্থাপনা ও বাড়ির সামনে একটা বড় দোকান করার জন্য। তার এই স্বপ্নগুলো পূরণ হলেই বিয়ে করবেন তিনি।
শুভ কুমার ঘোষ/ এআইএস